স্টাফ রিপোর্টারঃ চকচকে নতুন ৪০টি গাড়ি প্রস্তুত। গাড়িগুলোর সঙ্গে ৪০ জন চালককেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুত করা এসব গাড়ি বঙ্গভবনে যাত্রীর অপেক্ষায়। আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে এসে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করে এসব নতুন গাড়িতে করে ফ্ল্যাগ উড়িয়ে বঙ্গভবন ত্যাগ করবেন নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। অপেক্ষায় রাখা এ গাড়িগুলোতে কারা উঠছেন? এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা। দেশের পঞ্চমবারের প্রধানমন্ত্রী হতে চলা শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় কারা যোগদান করছেন তা নিয়ে যখন গুঞ্জন চলছে তখন মন্ত্রী পরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় মন্ত্রিসভায় জায়গা পাচ্ছেন এমন ২৫ জন মন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রী মোট ৩৬ জনের তালিকা প্রকাশ করেছেন। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠিত হচ্ছে।
এর আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ-এর (৩) ধারা অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট মোঃ সাহাবুদ্দিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন সংসদ সদস্য শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
যারা মন্ত্রিসভায় যোগদানের আমন্ত্রণ পেয়েছেন এবং মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন তারা কে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন তা নিয়ে গুঞ্জন-আলোচনা চলছে। নতুন সভা সদস্যদের শপথ পাঠ করাবেন প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন। পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে যারা শপথ গ্রহণ করবেন তারা হলেনÑ আ ক ম মোজাম্মেল হক, ওবায়দুল কাদের, নূরুল মজিদ হুমায়ূন, আসাদুজ্জামান খান কামাল, দিপু মনি, তাজুল ইসলাম, ফারুক খান, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আনিসুল হক, হাছান মাহমদু, আব্দুস শহিদ, সাধন চন্দ্র মজুমদার, র আ ম ওবায়দুল মোকতাদি, আব্দুল রহমান, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, আব্দুস ছালাম, মহিবুল হাসান চৌধুরী, ফরহাদ হোসেন, ফরিদুল হক খান, জিল্লুর হাকিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, নাজমুল হাসান এবং টেকনোক্র্যাট কোটায় ইয়াফেস ওসমান, ডা: সামন্ত লাল সেন।
প্রতিমন্ত্রীর জন্য যারা শপথ গ্রহণ করবেন তারা হলেনÑ সিমিন হোসেন রিমি, নসরুল হামিদ বিপু, জোনাইদ আহমেদ পলক, মোহাম্মদ এ আরাফাত, মহিবুর রহমান, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জাহিদ ফারুক, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, রুমানা ্আলী, শফিকুর রহমান চৌধুরী, আহসানুল ইসলাম টিটু। নতুন মন্ত্রিসভায় ২ জনকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নতুন সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন। গতকাল শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে গেলে তাকে এ আমন্ত্রণ জানানো হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। অতঃপর পর্যায়ক্রমে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা শপথ গ্রহণ করবেন। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এই শপথের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন শেখ হাসিনা। সব মিলিয়ে তিনি পাঁচবার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন।
বিদায়ী সরকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারে ৪৫ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী আছেন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীসহ ২৪ জন পূর্ণ মন্ত্রী, ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী। গত ৭ জানুয়ারি দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই হিসেবে নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফল প্রকাশের চার দিনের মাথায় নতুন সরকার শপথ নিতে যাচ্ছে। পুরনো মন্ত্রিসভার বেশির ভাগ সদস্য নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পেলেও কয়েকজন বাদ পড়েছেন। তবে প্রায় ৮ থেকে ১০ জন নতুন মুখ মন্ত্রিসভায় জায়গা পাচ্ছেন।
গতকাল বুধবার বিকেলে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন নতুন সরকার গঠনের অনুমোদন দিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন সংসদ সদস্য শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন এবং তার নেতৃত্ব নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে গণ্য হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২২ আসনে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামী লীগ। নিরঙ্কুশ এই জয়ের ফলে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে দলটি। গত বুধবার সকাল ১০টায় নতুন সংসদ সদস্যরা (এমপি) শপথ নিয়েছেন। মন্ত্রিসভা গঠন প্রসঙ্গে সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, যিনি সংসদ সদস্য, সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলে প্রেসিডেন্টের কাছে প্রতীয়মান হবেন, প্রেসিডেন্ট তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্ধারণ করবেন, সেভাবে অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দিয়ে থাকেন। আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, বর্তমান মন্ত্রিসভার ‘ক্লিন ইমেজধারী’ ও অভিজ্ঞ সদস্যদের নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান দেয়া হচ্ছে। এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রিসভায় ৪৭ সদস্যের মধ্যে ২৭ জন প্রথমবারের মতো ঠাঁই পেয়েছিলেন এবং ২০ জন ছিলেন পুরাতন মন্ত্রিসভার।
এবার যে তিনজন প্রতিমন্ত্রী পরাজিত হয়েছেন, তাঁরা হলেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। এর আগে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।