নিউইয়র্কে বাফেলো সাহিত্য আসরের ৩৪তম সভা অনুষ্ঠিত

কাজী হারুন, নিউইয়র্কঃ নিউইয়র্কে বাফেলো সাহিত্য আসরের ৩৪তম সভা অনুষ্ঠিত। কাজী হারুনের পরিচালনায় উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত সাহিত্যিকদের নিয়মিত মিলনমেলা বাফেলো সাহিত্য আসরের ৩৪তম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৩ শনিবার, বাফেলোর বহুল পরিচিত লাভবার্ড রেস্টুরেন্ট মিলনায়তনে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন জনাব মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন। আসরের প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার কবি মারুফ সোবহান এর পরামর্শক্রমে কাজী হারুনের সার্বিক পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় এবারের সাহিত্য আসরের সভাপতির আসনে সম্মানিত হন বাফেলোর পরিচিত মুখ জনাব আজিজ মজুমদার। আসরের এক একটি পর্বে একেক জনকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সভাপতি হিসেবে সন্মানিত করা হয়।
কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানানো হয় অনুষ্ঠানে আগত সকল সম্মানিত সাহিত্যিক এবং মেহমান বৃন্দকে। সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা এবং সম্মানের পাশাপাশি বাফেলো সাহিত্য আসরকে ভালোবেসে যারা নিজেদেরকেই আলোকিত করে চলেছেন, সময়ের পরিক্রমায় সেটি বিশ্ব ইতিহাসের সাহিত্য পাতায় একদিন চিহ্নিতও হতে পারে। ‘সুস্থ সাহিত্য চর্চায় সমাজ হোক মানবিকতায় আলোকিত’ এই স্লোগানকে কন্ঠে ধারণ করে ‘বাফেলো সাহিত্য আসর’ আগামী দিনের মানবিক এবং সুস্থ ধারার সাহিত্যিক এবং সাহিত্য বিনির্মাণে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে মর্মে মতামত ব্যক্ত করা হয়।
অনুষ্ঠানে কাজী হারুনের প্রথম প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘আপন আলোর বৃত্ত’ এর মোড়ক উন্মোচন করেন ইঞ্জিনিয়ার কবি মারুফ সোবহান এবং সম্মানিত উপস্থিতির সাথে বইটির পরিচয় করিয়ে দিয়ে বইটির বহুল প্রচার, প্রসার এবং লেখকের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ভাষা সৈনিক সর্বজনাব শামসুল হুদা ‘আপন আলোর বৃত্ত’ বইটির বহুল প্রচার, প্রসার এবং লেখক হিসেবে কাজী হারুনের উত্তরোত্তর সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করেন। বিশেষ মেহমান হিসেবে জনাব হাসান আমজাদ খান ‘আপন আলোর বৃত্ত’ বই, লেখক এবং সাহিত্য আসর সম্পর্কে স্মৃতিচারণমূলক বিশেষ বক্তব্য পেশ করেন। হলভর্তি মেহমানরা সম্মানিত মেহমানদের বক্তব্য গভীর আগ্রহের সাথে শুনছিলেন।
বিশেষ মেহমান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) জনাব ফজলুর রহমান এবং বেগম রাশেদা আক্তার এবং ৩৪তম পর্বের তিনজন ভাগ্যবান লটারি বিজয়কে পুরস্কার প্রদান ও স্পনসর করেন। সকলেই বইটির বহুল প্রচার, প্রসার এবং লেখক হিসেবে কাজী হারুনের উত্তরোত্তর সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করে বক্তব্য সহ দোয়া করেন। কাজী হারুনও সকলের কাছে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অর্থ, খ্যাতি, যশ অথবা সময় কোন কিছুই সাহিত্যের সাথে তুলনীয় নয়। সাহিত্যচর্চা হলো মননশীলতার পরিচয়। আপনি কতটা মানবিক, কতটা সুন্দর আপনার অন্তরাত্মা, মাতৃভাষার প্রতি, মাতৃভূমির প্রতি, মাতৃভূমির মানুষের প্রতি আপনি কতটুকু চিন্তা করেন, সেটাই আপনার সাহিত্যশৈলীর পরিচয়। যারা এসব চিন্তার বলে বলিয়ান তারাইতো এই প্রবাসে থেকেও নিজেদের অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং মহামূল্যবান সময় ব্যয় করে সাহিত্যকে আত্মার খোরাক মনে করে সময়টুকু জলাঞ্জলি দেন। যারা প্রকৃত অর্থে সাহিত্যকে ভালোবেসে এই কাজটুকু করেন তিনি ও তাঁরা অবশ্যই মহান এবং মহানুভব। এই মহান এবং মহানুভব মানুষগুলোর কাছে বাফেলো সাহিত্য আসর আজীবন কৃতজ্ঞ।
৩৪তম সাহিত্য আসরের সম্মানিত সকল মেহমানদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ভাষা সৈনিক জনাব শামসুল হুদা সাহেব, হাসান আমজাদ খান, করিম মোহাম্মদ বিপ্লব, হাবিব ফয়েজী, আজিজ মজুমদার, নুরুন্নবী খোকন, এ এইচ মতিন, ফেরদৌস নয়ন, কাজী ইসলাম, আসাদুল বারী মানিক, কালাম উদ্দিন, জাহিদুল হক চৌধুরী, নাট্যকার হাবিব দুলাল, ইকবাল হোসাইন, ওসমান শিমুল, সায়ীদ জিল্লু , হালিমা আক্তার ডলি, মাহফুজা খানম, ডাঃ লুনা কানিজ ফাতেমা, আবিদ হাসান, শাহাদাত হোসেন, সৈয়দ সাঞ্জিদ, আরিফ শরীফ, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ সহ আরো অনেকে। যাদের নাম এখানে আসেনি তাদের প্রতি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
এই প্রবাসে সকল নেতিবাচক মানুষগুলোকে পাশ কাটিয়ে শুধুমাত্র পজেটিভ মানুষগুলোকে সাথে নিয়ে একটি সুন্দর সমৃদ্ধ সাহিত্যাঙ্গন প্রতিষ্ঠার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রধান অতিথি সহ সকল বক্তা সে ধরনের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। ৩৪তম সাহিত্য আসরে উপস্থিত সকল সাহিত্যিক এবং মেহমান বৃন্দকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়। এ ব্যাপারে এমন একটি সমাজ রচনা করার কথা বলা হয়, যেখানে থাকবে না কোন হিংসা, বিদ্বেষ, শয়তানি এবং মুনাফিকি। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে বাংলাকে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দেয়ার কথাও বলা হয়।
জাতি হিসাবে একটি সমৃদ্ধ, সুন্দর এবং রুচিশীল মানবিকতায় গড়ে তুলে নিজেদেরকে এবং পরবর্তী প্রজন্মকে আরো সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি নৈতিকতা, সততা, নিষ্ঠা, আদর্শ, কর্তব্যপরায়ণতা এবং সামাজিক সম্প্রীতির মেলবন্ধন তৈরির আহবান জানানো হয়।
সমাজের প্রতিটি মানুষ আলোকিত হলেই নিজেকে আলোকিত মানুষ হিসাবে মনে হবে এবং সেটাই প্রত্যাশা। প্রত্যেকে প্রত্যেকের অবস্থান থেকে নিজেকে একজন সত্যিকারের মানুষ হিসাবে চিন্তা করার জন্য এবং মানুষ হিসাবে পরিচালিত করার জন্য এগিয়ে যাওয়া এবং অন্তরের সমস্ত শক্তি দিয়ে সমভাবে সকলকে ভালোবাসলেই সমাজ আলোকিত হতে পারে। সবশেষে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *