বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক ও কিম অং জড়িত, তা যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট কোটের রায়ে প্রমাণিত। সোমবার (৪ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র সাঈদা খানম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
তাতে বলা হয়, নিউইয়র্ক স্টেট কোর্ট, ফার্স্ট অ্যাপিলেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে রায় প্রদান করেছে। আদালত নিশ্চিত করেছে যে, আরসিবিসি’র কর্মকর্তা ও কিম অং কর্তৃক বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির মামলাটি নিউইয়র্কে পরিচালিত হবে। ফার্স্ট ডিপার্টমেন্ট স্টেট কোর্টের রায় বহাল রেখেছে, অর্থাৎ ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে পরিচালিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব হতে ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরির সাথে আরসিবিসি, ব্যাংকটির দুই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা লরেঞ্জো টান ও রাউল ভিক্টর বি টান, কিম অং এর সংশ্লিষ্টতা বিষয়ক স্টেট কোর্টের রায়কে ফার্স্ট কোর্ট নিশ্চিত করেছে।। ফার্স্ট ডিপার্টমেন্ট এর রায়ে আরো নিশ্চিত করেছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে সংঘটিত অপরাধের জন্য আলোচ্য বিবাদীদেরকে দায়ী করা যায়।
ফার্স্ট কোর্টের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতারণার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে চুরির ঘটনায় আরসিবিসি ও এর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং কিম অং-কে দায়ী করা যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযোগ অনুযায়ী বর্ণিত বিবাদীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরিকৃত অর্থ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল এবং উক্ত অর্থ ফেরত প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের স্টপ পেমেন্ট পাওয়া সত্ত্বেও সেই অর্থ বৈদেশিক মুদ্রা ও আরসিবিসি’র ট্রেজারির মাধ্যমে লন্ডারিং করার সুযোগ করে দিয়েছে বিধায় এ বিবাদীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
অধিকন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তার কমপ্লেইন্টে আরও উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্টপ পেমেন্ট অনুরোধ পাওয়া সত্বেও আরসিবিসি’র বেনামি ব্যাংক হিসাব হতে প্রায় ৫৮.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার স্থানান্তর করা হয়েছে এবং এটি যে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থ এ বিষয়ে সন্দেহাতীতভাবে আরসিবিসি’র সকলেই অবহিত ছিল।
আরসিবিসি’র ক্ষেত্রে- বেনামী হিসাব খোলা, চুরি সংঘটনের জন্য নিউইয়র্কের করেসপন্ডেন্ট হিসাবের ব্যবহার, বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া তহবিল দিয়ে লাভজনক বৈদেশিক বাণিজ্য সংঘটন, হ্যাকাররা আরসিবিসি’র পক্ষে বা নির্দেশনায় কাজ করেছে প্রভৃতি অভিযোগের বিষয়ে আদালত প্রভাবিত হয়েছে।
কিম অং এর বিষয়ে আদালত তার আদেশে উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক তার বিরুদ্ধে চুরি ও মানিলন্ডারিংসহ ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার যথাপোযুক্ত অভিযোগ করেছে। লরেঞ্জো টানের বিষয়ে আদালত বলে, সে কিম অং এর দীর্ঘদিনের বন্ধু। তিনি আরসিবিসি’র কর্মকর্তাদেরকে কিম অং-কে খেয়াল রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি বেনামী হিসাব সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং আরসিবিসি’র বেনামী হিসাবসমূহে জমা হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া ৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ফেরত প্রদানে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি।
আদালত আরো উল্লেখ করে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থ অবিলম্বে ফেরত চাওয়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে রাউল ভিক্টর বি টান বিভ্রান্তিকর বার্তা প্রেরণের সাথে জড়িত ছিলেন।
আরসিবিসি’র কয়েকজন কর্মকর্তা, যারা চুরি পরবর্তী মানিলন্ডারিংয়ের সাথে জড়িত ছিলেন তাদেরকে আদালত আলোচ্য মামলা হতে অব্যাহতি প্রদান করেছে। আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের কনভারসেশন ক্লেইমস ব্যতীত অন্যান্য অভিযোগসমূহ অব্যাহত রাখার অনুমতি প্রদান করেছে।
ফার্স্ট কোর্ট তার রায়ে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বিবাদীদের বিপক্ষে জালিয়াতি, অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন, অনধিকার প্রবেশ এবং অর্থগ্রহণ প্রভৃতি অভিযোগ নিয়ে অগ্রসর হতে পারে। ফিলিপাইনের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো যোগাযোগ না থাকা এবং কোনো ব্যবসা না থাকার বাস্তবতার বিষয়ে আদালত প্রভাবিত হয়েছে। আদালতের এই সিদ্ধান্ত প্রকারন্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকে সংঘটিত চুরির সহযোগীদের বিরুদ্ধে নিউইয়র্কে ব্যবস্থাগ্রহণ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, আদালতের এ রায়ের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক পরবর্তী পদক্ষেপ বিষয়ে পর্যালোচনা করছে। এ সকল পদক্ষেপ শুধু আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের আপিল বা আরসিবিসি ও কিম অং এর আপিল (যদি করে) এর জবাব প্রদান এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিচারিক আদালতে চলমান ডিসকভারি প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।