৭ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল একটি অত্যন্ত মেরুকৃত রাজনৈতিক পরিবেশে পরিচালিত নির্বাচন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিছু আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে শুক্রবার (৮ মার্চ) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইইউ’র নির্বাচন বিশেষজ্ঞ মিশন। প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার যেমন- সমাবেশ, সমিতি, আন্দোলন, এবং বক্তৃতা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাংলাদেশের নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেটি সীমাবদ্ধ ছিল। বিচারিক কার্যক্রম এবং গণগ্রেফতারের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা মারাত্মকভাবে সীমিত হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক দলগুলোর আসন ভাগাভাগির চুক্তি এবং আওয়ামী লীগের নিজস্ব প্রার্থী ও দলের সাথে যুক্ত ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীদের’ মধ্যে প্রতিযোগিতা ভোটারদের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়নি বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজের জন্য বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করার মতো পরিবেশ ছিল না। নির্বাচনের কোনো স্বাধীন মূল্যায়ন নির্দলীয় নাগরিক সমাজ দ্বারা পরিচালিত হয়নি।

ইইউ বলে, সাত জানুয়ারির নির্বাচন ছিল একটি অত্যন্ত মেরুকৃত রাজনৈতিক পরিবেশে পরিচালিত নির্বাচন। বিএনপি ও তার জোট শরিকরা নির্বাচন বয়কট করায় এতে সত্যিকারের প্রতিযোগিতার অভাব ছিল। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় দেশের নাগরিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের উল্লেখযোগ্য অবনতি হয় বলে মনে করেন ইইউর প্রতিনিধিরা।

বিএনপির বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনের পুরো সময়জুড়ে বিরোধী দলগুলোর সমাবেশ, সমিতি, আন্দোলন এবং বক্তৃতার স্বাধীনতা কঠোরভাবে সীমিত করা হয়। গ্রেফতার এড়িয়ে যেকোনও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষমতা বিএনপির পক্ষে অসম্ভব ছিল। কারণ- প্রায় সব সিনিয়র নেতৃত্বকে কারাবন্দি করা হয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যেকোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঠেকাতে ফৌজদারি অভিযোগ গঠন একটি কৌশলের অংশ বলেও দাবি করা হয় প্রতিবেদনে।

নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমিশনের ব্যাপক ক্ষমতা থাকলেও আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল। তাই তারা একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দিতে সক্ষম হয়নি বলে মনে করে কিছু স্টেকহোল্ডার। তাদের ধারণা, ভোটদান এবং গণনা প্রক্রিয়ার সময় কমিশনের স্বাধীন মর্যাদা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত করা হয়নি।

আরও বলা হয়, অযথাই প্রার্থীদের অধিকারকে সীমিত করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণা সমাবেশ যেমন- আন্দোলন এবং বক্তৃতার স্বাধীনতার উপর ব্যাপক সীমাবদ্ধতার প্রতিফলন লক্ষ্য করা গেছে। ফলে একটি সম্পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের অভাব ছিল। আওয়ামী লীগই ছিল একমাত্র দল যারা বৃহৎ প্রচার র‍্যালিসহ যেকোন উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম সংগঠিত করতে পেরেছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *