২৮ অক্টোবর ২০২৩, দেশের রাজনীতিতে লিখে রাখার মতো দিন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এদিনই ব্যাকফুটে যায় রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। এরপর থেকে এখনও বড় কোনো সমাবেশ করতে পারেনি বিএনপি। এর মধ্যে চব্বিশের নির্বাচন প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়ে দলটি এখন অনেকটাই স্তব্ধ-কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
অপরদিকে, ভোট নিয়ে নানা সমালোচনা থাকলেও সরকার গঠন করে কিছুটা ফুরফুরে মেজাজে আওয়ামী লীগ। টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় এসে নিজেদের অবস্থান আরও পোক্ত করেছে।
তবে, ভোট পেরিয়ে দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই প্রশ্ন এখন, আবারও কি উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গন? বিভিন্ন দাবিতে শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) জেলায় জেলায় আর শনিবার মহানগরে কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আর শনিবার রাজধানীতে শান্তি সমাবেশ ডাকলো আওয়ামী লীগ।
তাই প্রশ্ন উঠছে, আবারও কি সংঘাত-সহিংসতার পথে হাঁটছে রাজনীতি? এ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নতুন সমীকরণ। এসব নিয়ে কী ভাবছেন প্রধান দুই দলের নেতারা?
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বললেন, আমরা তো আমাদের এক দফা থেকে এখনও একচুল সরে আসিনি। সরকার রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করে গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমাতে চায়। সেজন্য বিএনপি এখন তার কৌশল ঠিক করছে। অতীতের কৌশলও ব্যর্থ হয়নি, পরাজিত হয়েছে সরকারের রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের কাছে। আমি মনে করি, আগামীতে রাজনীতি উত্তপ্ত হবে এবং উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এ নেতার দাবি, আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটাধিকার হরণ করছে, কেড়ে নিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার। তাই অধিকার আদায়ে লড়াই চলবে। তিনি বলেন, আমাদের এক দফা এখনও আছে। যেকোনো তালবাহানা তারা করুক না কেনো, জনগণ ও নেতাকর্মীরা সংগঠিত হচ্ছে। ধীরে ধীরে আমরা মামলা-হামলা থেকে বের হয়ে আসছি। খুব দ্রুতই আবার কঠোর আন্দোলনে নামবো। ভোটের অধিকার ফিরিয়েই ঘরে ফিরবো।
তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি বলেন, শুধুমাত্র দায়সারা কর্মসূচি দিয়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি তাদের দেউলিয়াত্ব অথবা অন্তঃসারশূন্যতা প্রমাণ করছে। দেশবাসী সেটি নিশ্চয় মূল্যায়ন করবে।
তার দাবি, আওয়ামী লীগ ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছে এবং সাংবিধানিক ধারা সমুন্নত রেখেছে। তাই বিশৃঙ্খলা করলে রাজপথে সমুচিত জবাব দেয়া হবে।
বাহাউদ্দিন নাছিম আরও বলেন, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা দেখবে। তবে রাজনৈতিক সহিংসতার জবাব রাজপথেই দেয়া হবে। দেশের সম্পদ রক্ষায় কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
এদিকে, বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, শান্তি সমাবেশের নামে অশান্তি সৃষ্টিই করাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের নামে অশান্তি সৃষ্টি করছে। ইতোপূর্বেও তারা করেছে। তারা এই অশান্তির সমাবেশ করে বিএনপির কর্মসূচি প্রতিহত করতে পারবে না। আমাদের যে কর্মসূচি সেটি আমরা পালন করছি। দাবি আদায়ের যে সংগ্রাম সেটি চলছে এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলবে।
বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী আবদুন নূর দুলাল বলেন, আওয়ামী লীগ এত দেউলিয়া হয়নি যে বিএনপিকে অনুসরণ করবে। আমরা আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি দিই, সেটি তাদের সাথে মিলে যেতেই পারে।
বিশ্লেষকদের মত, সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটের স্থায়ী সমাধান হওয়া জরুরি। সংঘাত-হানাহানি পরিহারে দেশের বড় দুই দলকেই নমনীয় হওয়ার পরামর্শ তাদের।