সোনালি আঁশের রুপালি কাঠিতে স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা

অর্থকরী ফসল হিসেবে সারা দেশে পাটের বহুবিধ ব্যবহার হলেও পাটকাঠির কদর ছিল নিতান্তই কম। কালের পরিক্রমা ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় বর্তমানে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে পাটকাঠির চাহিদা ও কদর বহুগুণে বৃদ্ধি পাওয়ায় সোনালি আঁশের রূপালি কাঠিতে লাভবান হচ্ছেন এলাকার কিষাণ-কিষাণি।

আদিকাল থেকেই রান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া, পানের বরজ ও গৃহস্থালি সামগ্রীসহ বিভিন্ন শৌখিন পণ্য তৈরিতে পাটকাঠি কমবেশি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ বিভিন্ন পার্টিকেল বোর্ড তৈরি ছাড়াও নানা রকম কলকারখানায় পাটকাঠির ব্যবহার বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে পাটকাঠির চাহিদা ও মূল্য ক্রমশ বেড়েই চলেছে। আর তাই এখন পাটকাঠির বহুমুখী ব্যবহারে পাটের চেয়ে পাটকাঠিতেই লাভবান হচ্ছেন কৃষক।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বাসুরচর, সাহেবের চর, চর হাজীপুর ও চরকাটিহারীসহ ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, গ্রামীণ ছোট বড় রাস্তার দু’পাশে পাটকাঠি সংগ্রহ ও শুকাতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কিষাণ-কিষাণিরা। বিশেষ করে জ্বালানি সংগ্রহে অনেক দরিদ্র মহিলা পাটকাঠির বিনিময়ে পাটের আঁশ ছাড়াতে কৃষকদের সহায়তা করছেন। অনেক নারী, পুরুষ ও শিশু খাল-বিল ও জলাশয়ের ধারে একত্রে বসে পাট থেকে আঁশ ছাড়ানোর বিনিময়ে পাটকাঠি নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে।

উপজেলার সাহেবের চরের দরিদ্র গৃহিণী হেলেনা খাতুনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার বাড়িতে জ্বালানি না থাকায় তিনি শ্রমের বিনিময়ে পাটকাঠি সংগ্রহ করতে এসেছেন। একই গ্রামের কৃষক ফরিদ উদ্দিন, আল-আমিন ও শাহজাহান জানান, এবার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন স্থানে পাট জাগ দিয়েছেন তারা।

তিনি আরও জানান, সবখানেই পাটের আঁশ ছাড়ানোর বিনিময়েই দিয়ে দিচ্ছেন পাটকাঠি। এতে পাট চাষের খরচ উঠে এসে আরো বাড়তি কিছু লাভ হচ্ছে তাদের। তাই সবাই পাটের আঁশ ছাড়ানোর বিপরীতে পাটকাঠি দিয়ে দিচ্ছেন।

স্থানীয় পাটকাঠি ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন জানান, পাটের মৌসুমে বিভিন্ন স্থান থেকে গড়ে ১৫-২০ টাকা করে এক মুঠো পাটকাঠি কিনে শহরে নিয়ে তা ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি করেন। এতে তাদের দৈনিক ১০০০-১৫০০ টাকা আয় হচ্ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহজাহান কবির জানান, পাটের সোনালি আঁশের সাথে রূপালি পাটকাঠিও এখন কৃষকদের কাছে বাড়তি আয়ের অন্যতম উৎস। এ পাটকাঠি গৃহিণীদের জ্বালানি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি নানাবিধ শৌখিন কাজেও বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, তাই পাট জাগ দেয়ার পর থেকে শেষ পর্যন্ত পাটের রঙ ও পাটকাঠির মান ঠিক রাখতে কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করছেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *