রাজধানীতে ধুলা আর বায়ুদূষণে বৃক্ষের জীবনচক্র সংকটে

ভালো নেই রাজধানী ঢাকার গাছেরা। ধূলা আর বায়ুদূষণের কবলে পড়ে ধুঁকছে তাদের স্বাভাবিক জীবনচক্র। যার অক্সিজেনে বেঁচে থাকবো আমরা, সেই গাছই মারা পড়ছে অযত্ন আর অবহেলায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে গাছের যত্নের বিকল্প নেই। কিন্তু সব জেনে বুঝেও উদ্যোগ নেই কোন মহলের।

সরেজমিন দেখা যায়, ধূলায় ধুসরিত সড়ক দ্বীপের গাছগুলো। ধূলার আস্তর এতটাই পুরু যে আলো বাতাসের ছোঁয়ার সুযোগ পায় না নতুন কুড়িরাও। মারা পড়ছে নতুন ফল দিতে শুরু করা গাছগুলোও।

অথচ, নিয়মিত একটু পানি পেলেও বেরিয়ে আসে নতুন নতুন কুড়ি, অনুভব করা যায় প্রাণের অস্তিত্ব। তবে তা না হওয়ায়, নির্দয় নগরীকে গাছগুলো নিঃশব্দ অভিযোগ জানায়।

গাছের অক্সিজেন নিয়ে বাঁচে মানুষ। কিন্তু পাতায় যখন ধুলার আস্তর জমে, গাছের পক্ষেও সম্ভব না অক্সিজেন তৈরি করা। এতে ঢাকার বাতাস হয়ে উঠছে আরও বিষাক্ত।

সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি, সড়কের পাশে অরক্ষিত অবস্থায় ইট, বালু, সিমেন্টসহ নির্মাণ সামগ্রী, গাড়ির চাকার সাথে ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। উড়ে উড়ে জমে গাছের পাতায়। সমীক্ষা বলছে, ঢাকায় গাছের পাতায় প্রতিদিন ধুলা জমে ৪৩৬ মেট্রিক টন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার এ বিষয়ে বলেন, ঢাকা শহরের যে বাচ্চারা আছে, তাদের তো এমনিতেই খেলার মাঠ নাই। তারপরে ঘুড়ে বেড়ানোর কোনো জায়গা নাই। আর এদিকে বায়ুদূষণের ফলে অক্সিজেনের পরিমাণ যে কমে যাচ্ছে, সেটাও কিন্ত লক্ষনীয়। তবে, এদিকে কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

‘দ্য স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার-২০২৩’–এর তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র বায়ুদূষণজনিত রোগে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৯০ হাজার মানুষ মারা গেছে। বায়ুদূষণজনিত রোগে মৃত্যুর হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম।

নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, গাছের মতো প্রাকৃতিক যন্ত্রকে সতেজভাবে বেড়ে ওঠার জন্য যে বিনিয়োগ করা দরকার তার থেকে ১০-২০ গুন বেশি বিনিয়োগ করতে হচ্ছে স্বাস্থ্যখাতে। যা গাছের পেছনে করলে ওই খরচ টা লাঘব হতো। এজন্য, গাছ ও সড়ক পরিচ্ছন্নতার জন্য পানির ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

যদিও রাজধানীর রমনা পার্ক ও হেয়ার রোডের দুধারের গাছের আধিক্যের কারণে দূষণের মাত্রা খুবই কম। গবেষকদের মতে ঢাকায় দরকার দেবদারু, আম, জাম ও বটের মত গাছের, যারা অতি দূষণেও টিকে থাকে। সেইসাথে বিদ্যমান গাছগুলোর জন্য চাই সঠিক পরিচর্যা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *