ঘুষ গ্রহণের ভিডিও ভাইরাল, শিক্ষক বরখাস্ত

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার গয়হাট্টা সালেহা ইসহাক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে ঘুষে টাকা লেনদেনের দেনদবারসহ বিসমিল্লাহ বলে টাকা নিতে দেখা গেছে। এঘটনায় অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবীতে সোচ্চার হয়ে ওঠেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, উল্লাপাড়া উপজেলার পূর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গয়হাট্টা সালেহা ইসহাক উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টিতে এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। চলতি বছরে বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক, ল্যাব সহকারী ও নৈশপ্রহরী নিয়োগ দেয়ার সিদান্ত হয়। কিন্তু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার আগেই প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম। ইতোমধ্যে তিনি একজন প্রার্থীর কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা ঘুষ নিচ্ছেন এমন ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যক্তি প্রধান শিক্ষককে তার নিজ কক্ষে ঘুষ দিতে যান। প্রথমে ২ লাখ টাকা প্রধান শিক্ষকের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক টাকা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে তিন লাখ টাকা নগদ তার হাতে দিয়ে বিসমিল্লাহ বলে গ্রহণ করতে বললে প্রধান শিক্ষক টাকাগুলো গ্রহন করেন। এছাড়াও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে পুকুর লিজের টাকা, রশিদ ছাড়া টাকা উত্তোলন, ভর্তি ও সেশন ফি এবং চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগও রয়েছে।

বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর শিক্ষার্থী আজিজুল ইসলাম ও আজিবুল ইসলাম রাজিবসহ শিক্ষার্থীরা জানায়, আমাদের প্রধান শিক্ষক ছাত্রদের পড়াশোনার শেখানোর বিষয়ে মনোযোগী নয়। স্কুলের উন্নয়ন নিয়ে তার কোন ভাবনা নেই। তিনি দুর্নীীতর মাধ্যমে টাকা-উপার্জন নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। শুনেছি স্কুলের টাকা-পয়দা মেরে উল্লাপাড়া শহরে বসতবাড়ী করেছেন। শহিদুল স্যার আসার পর থেকে আমাদের স্কুল ধীরে ধীরে অবনতির দিকে যাচ্ছে। তিনি নিয়মিত স্কুলে আসেন না। ক্লাসও নেন না। সেশন ফি ও স্মার্ট আইডি কার্ডের নাম করে এবং বই বিতরণের সময়ও টাকা নিয়েছে।

অভিভাবক আব্দুল হাকিম বলেন, প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বিদ্যালয়ের কাজকর্ম এবং পড়াশোনার দেখভাল ঠিকমতো করেন না। তিনি আগে যে প্রতিষ্ঠানে ছিলেন সেখানেও নারী কেলেঙ্কারিতে যুক্ত ছিলেন। ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় আমরা অভিভাবকরা লজ্জায় পড়ে গেছি।

অভিভাবক জহুরুল ইসলাম মাস্টার জানান, স্কুলে লেখাপড়ার মান নেই। ঠিকমতো ক্লাস হয় না। বর্তমান প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম মিথ্যাবাদী ও দুর্নীতিবাজ। তিনি বিদ্যালয়ের পুকুর লিজের টাকা আত্মসাৎ করেন। তিনি নিয়োগ দিয়ে ব্যাপক টাকা আত্মসাত করেছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বই বিতরণ করেছেন।

বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আল-আমিন সরকার বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। একাধিকবার বলার পরেও তিনি কোনো হিসাব দেন নাই। সম্প্রতি নিয়োগের কথা বলে তিন লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় কারন দর্শানোর নোটিশ দিলেও জবাব দেন নাই। এসব কারণে তাকে ম্যানেজিং কমিটির বৈঠক করে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম ভিডিওর বিষয়ে বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো টাকা আমি গ্রহন করি নাই। তবে কিসের টাকা নিচ্ছেন তা বলতে পারেননি। এছাড়াও তিনি স্কুলের সভাপতি বিরুদ্ধে স্কুলের অর্থ আত্মসাতসহ তাকে মারধর অভিযোগ তুলে বলেছেন, আমি থানায় মামলা দায়ের করেছি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *