ইসলামে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের তাৎপর্য

মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানভীঃ কুরআন অধ্যয়নের আলোকে বুঝা যায়, ঈমানের পর ঐক্য ও একতা মুসলিম জাতির উপর আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে বড় নিআমত। আর বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতা সবচেয়ে বড় শাস্তি। কুরআন আমাদের বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হওয়ার পরিবর্তে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতে বলে।

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে নিজ অনুগ্রহের কথা এভাবে বর্ণনা করেছেন : আল্লাহর রশিকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখ এবং বিভেদ করো না। আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন তা স্মরণ রাখ যখন তোমরা একে অন্যের শত্রূ ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরসমূহ জুড়ে দিলেন। ফলে তার অনুগ্রহে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিকুন্ডের প্রান্তে ছিলে। আল্লাহ তোমাদেরকে সেখান থেকে মুক্তি দিলেন। (সূরা আলে ইমরান : ১০৩)।

পবিত্র কুরআনে আদেশ করা হয়েছে, আমরা যেন বিভেদ সৃষ্টি না করে রাসূলের আনুগত্য করি। নতুবা আমাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং প্রভাব-প্রতিপত্তি হারিয়ে আমরা শত্রুদের চোখে হেয় প্রতিপন্ন হবো। ইরশাদ হয়েছে : তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং পরস্পর কলহ করো না। অন্যথায় তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব বিলুপ্ত হবে। আর ধৈর্য ধারণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। (আল আনফাল : ৪৬)।

পবিত্র কুরআনে পারস্পরিক মতভেদ দূর করার উপায়ও বলে দেয়া হয়েছে। কুরআন আমাদের বলে, কোনো বিষয়ে মতভেদ হলে তোমরা সমস্যা সমাধানের জন্য তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদালতে পেশ কর। এরপর কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক যে ফায়সালা আসে তা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নাও।

ইরশাদ হয়েছে : হে মুমিনগণ তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, তাঁর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা এখতিয়ারধারী তাদের। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যদি কোনো বিষয়ে বিরোধ দেখা দেয় তাহলে তোমরা আল্লাহ ও পরকালে সত্যিকারে বিশ্বাসী হয়ে থাকলে সে বিষয়কে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ন্যস্ত কর। এটাই উৎকৃষ্টতর পন্থা এবং এর পরিণামও সর্বাপেক্ষা শুভ। (সূরা নিসা : ৫৯)।

আরো ইরশাদ হয়েছে : (হে নবী) তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না নিজেদের পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদের ক্ষেত্রে তোমাকে বিচারক মানে, তারপর তুমি যে রায় দাও সে ব্যাপারে নিজেদের অন্তরে কোনোওরূপ কুণ্ঠাবোধ না করে এবং অবনত মস্তকে তা গ্রহণ করে নেয়। (সূরা নিসা : ৬৫)।

দুই মুসলমানের মাঝে ব্যক্তিগত কোনো বিষয়ে মনোমালিন্য হলে ইনসাফ ও তাকওয়ার ভিত্তিতে তাদের মাঝে সন্ধি স্থাপন করে দেয়াটাই অন্যদের প্রতি কুরআনের নির্দেশ। ইরশাদ হয়েছে : প্রকৃতপক্ষে সমস্ত মুসলিম ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমাদের প্রতি রহমতের আচরণ করা হয়। (সূরা হুজুরাত : ১০)।

আল্লাহ না করুন, এ বিভেদ যুদ্ধের রূপ নিলে এবং মুসলমানরা দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়লে কুরআন আমাদের বলে, রং ও বর্ণ, দেশ ও জাতীয়তা এবং গোত্র ও আত্মীয়তার সম্পর্কের ঊর্ধ্বে উঠে চিন্তা করা, এদের মধ্যে হক ও সত্যের পথে কে আছে; আর কে সীমালংঘন করছে। যে পক্ষ সীমালঙ্ঘন করবে তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করা আবশ্যক। এবং সীমালংঘন ছেড়ে আল্লাহর হুকুম মেনে না নেয়া পর্যন্ত তাদের সাথে কোনো ধরনের সন্ধি করতে কুরআনে স্পষ্ট নিষেধ করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন : মুসলিমদের দুটি দল আত্মকলহে লিপ্ত হলে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিও। অতপর তাদের একটি দল যদি অন্য দলের উপর বাড়াবাড়ি করে তবে যে দল বাড়াবাড়ি করছে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, যাবৎ না সে আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে আসে। সুতরাং যদি ফিরে আসে তবে তাদের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে মীমাংসা করে দিও। এবং (প্রতিটি বিষয়ে) ইনসাফ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন। (সূরা হুজুরাত : ৯)।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *