আন্দোলনের নামে মানুষ মেরে নির্বাচন বন্ধ করতে চায় বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টারঃ  মানুষ পুড়িয়ে নির্বাচন বন্ধ করা যাবে না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের কিছু মানুষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নাশকতা করছে। আন্দোলনের নামে মানুষ মেরে বিএনপি নির্বাচন বন্ধ করে ফায়দা লুটবে, সেটা মেনে নেয়া হবে না।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এই মন্তব্য করেন। এসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে ও প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানাও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
যারা আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার মতো জঘন্য হামলা চালানোর নির্দেশ দেয় এবং যারা সেই নির্দেশ পালন করে তাদের কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, এক মা তার ছোট সন্তানকে বাঁচাতে বুকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন, সেভাবেই পুড়ে মারা গেছেন। আমরা এই ধরনের দৃশ্য দেখতে চাই না।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে, বাস এবং ট্রেন ও অন্যান্য যানবাহনে আগুন দিয়ে লাভটা কী হবে? মানুষ হত্যা, রেললাইনের ফিশপ্লেট উপড়ে ফেলে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে জনগণের সম্পত্তির ক্ষতি করে তারা কী অর্জন করেছে? এটা কী ধরনের রাজনীতি, আমি জানি না। মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা মহাপাপ ও অন্যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই অন্যায় আর সহ্য করা যায় না। কোনো ধর্মগুরু এটা মেনে নিতে পারেন না। মানবতার জন্য যিশু খ্রিস্ট তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবতা ও মানবজাতির কল্যাণই সব ধর্মের মূল কথা। আমরা সেই বিশ্বাস থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি।

এদেশের মাটি জাতি-ধর্ম-বর্ণ-পেশা নির্বিশেষে সবার। এখানে সবাই স্বাধীনভাবে বসবাস করবে। আমি সবার কল্যাণ ও উন্নয়ন কামনা করি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হওয়ায় সকল ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। সব ধর্মের মানুষ তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান অবাধে (দেশে) পালন করবে। ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার।
এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিশ্ব মঞ্চে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এ অঞ্চলের মানুষ হাজার বছর ধরে ধর্মীয় সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছে। ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই রক্ত দিয়েছেন এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন।
তিনি ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ ও ‘স্মার্ট সোনার বাংলাদেশে’ রূপান্তরিত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, তারা ইতিমধ্যে দেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছেন।

গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবতা প্রচারের মহৎ উদ্দেশ্যে জীবন উৎসর্গকারী যিশু খ্রিস্টের জন্মস্থানে শিশু ও নারীদের হত্যা করা হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখের বিষয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যখনই আমি সুযোগ পাচ্ছি, বারবার যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বড়দিন উপলক্ষে দেশে ও বিদেশে অবস্থানকারী খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজনকে শুভেচ্ছা জানান।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, আর্চবিশপ বেজয় নাইসেফরাস ডি’ক্রুজ, বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি জুয়েল আরং এমপি, এডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার এমপি, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এ হামিদ জমাদ্দার, বাংলাদেশ খ্রিস্টান লীগের সভাপতি ড্যানিয়েল নির্মল ডি. কস্তা এবং বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত আই কোরায়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও।

ঢাকার আর্চবিশপ আর্চবিশপ বেজয় নাইসেফরাস ডি’ক্রুজ এবং বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে বড়দিনের শুভেচ্ছা কার্ড তুলে দেন। অনুষ্ঠানে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যরা বড়দিনের ক্যারোল এবং অন্যান্য দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *