৭ জানুয়ারির নির্বাচন রুখে দেয়ার আহ্বান বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টারঃ  সরকারের পদত্যাগের একদফা এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে ফের দুই দিনের নতুন কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- রোববার ৩১ ডিসেম্বর এবং সোমবার ১ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট বর্জনে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ। গতকাল শনিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই ঘোষণা দেন। এছাড়া ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে একাদশ নির্বাচনে আগের রাতে ভোট ডাকাতির নিন্দা জানান তিনি।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারের পদত্যাগের একদফার আন্দোলন এখন বেশি ত্বরান্বিত হচ্ছে। প্রতিটি জনগণ আমাদের কর্মসূচিতে সমর্থন দিচ্ছে। নেতাকর্মীরা হাটে-মাঠে, খেতে-খামারে বাজারে-শপিংমলে জনগণকে আমরা লিফলেট দিয়েছি। তারা আমাদের কথা শুনেছেন এবং সমর্থন দিচ্ছেন। কিন্তু অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করতে সরকার ২০১৩-১৪-১৫ সালে যেভাবে ষড়যন্ত্র করেছে সেটাই আবারও করছে। পুলিশ হয়রানি করছে, গ্রেপ্তার ও মামলা দিচ্ছে।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির সর্বময় ক্ষমতাধর হওয়ার ইচ্ছার কারণে আজ সারাদেশকে নৈরাজ্যের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে সরকার। অথচ একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তির চেতনা। কিন্তু আজকে দেশের মানুষ আতঙ্কের মাঝে দিন পার করছে। দেশে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটেছে এবং নারকীয় প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। চারদিকে পুলিশ-র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রাজত্ব চলছে। বাড়ি থেকে লোকজনকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। নারীদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করছে। গ্রেপ্তার করলেও কোনো তথ্য দিচ্ছে না।

রিজভী বলেন, গণতন্ত্রে বিরোধী দল স্বীকৃত সত্য। কিন্তু সরকার সেটাকে মানতে চান না। যাতে তাদের ক্ষমতার মধুর হাড়ি উল্টে না যায়। সেজন্যই শেখ হাসিনার ফ্যাসিজমকে পাহাড়া দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির নেতাকর্মীরা বিএনপিকে নির্মূলের হুঙ্কার দিচ্ছেন। কিন্তু বিএনপি জনপ্রিয় কি না সেটা তো সুষ্ঠু নির্বাচনেই প্রমাণিত হবে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা জনগণকে আতঙ্কের মধ্যে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছেন। তিনি তো জনগণের ওপর তার সাজানো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সীমাহীন দমন-পীড়ন চালাচ্ছেন। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে আওয়ামী লীগ ভয় পাচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে নীলনকশার বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশকে নিয়ে গভীর ও ভয়ানক চক্রান্ত চলছে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।

প্রধানমন্ত্রীর হিংসার মাত্রা বেড়েই চলছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিয়ত জিঘাংসামূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি রাজনীতির নীতি নৈতিকতাকে মানছেন না। তারেক রহমান ও জিয়া পরিবারকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে ধরনের বক্তব্য দেন তা মিথ্যা ও কটূক্তিমূলক। কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের বক্তব্য দিলে সে দেশের জনগণের শালীনতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। আমি তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

এছাড়াও সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভোট বর্জনে লিফলেট বিতরণকালে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলায় হয়রানির নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে রিজভী বলেন, ২৪ ঘন্টায় ১৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার, ৬টি মামলায় ৪২৯ জনের বেশি আসামি করা হয়েছে।

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কটের পর এখন ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখ করাই মূল লক্ষ্য বিএনপির। সাধারণ মানুষকে ভোটে নিরুৎসাহিত করতে সব ধরনের চেষ্টা করবে দলটি। ভোটদানে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে সারা দেশে ১ কোটির বেশি লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি ভার্চুয়াল মাধ্যমেও নানা কৌশলে ভোট বর্জনের প্রচার অব্যাহত রয়েছে। জনসংযোগের নানামুখী পদক্ষেপের পাশাপাশি দাবি আদায়ে কঠোর আন্দোলনও অব্যাহত রাখা হবে।

৭ জানুয়ারির নির্বাচন রুখে দেওয়ার আহ্বান:
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচন রুখে দেওয়ার আহ্বান জানান রুহুল কবির রিজভী। গতকাল রাজধানীর উত্তরায় লিফলেট বিতরণকালে তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বন্ধ করতে হবে, এটি এতরফা নির্বাচন, এটি অবৈধ নির্বাচন, ভাওতাবাজির নির্বাচন, জনণের সঙ্গে প্রতারণার নির্বাচন, ভোটারদের সঙ্গে প্রতারণা করার নির্বাচন। এ ডামি নির্বাচনের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং নির্বাচন বয়কট করতে হবে।

তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নিতে মানুষ পুড়িয়ে মারে আওয়ামী লীগের লোকেরা, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা। কয়দিন আগে ভোলায় বোমা বানাতে গিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসী মারা গেছে। বিভিন্ন স্থানে পেট্রোল বোমাসহ হাতে নাতে ধরা পড়েছে যুবলীগ, ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা। আর দায় চাপাচ্ছে বিএনপির উপর। তিনি বলেন ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে তারাই বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায় চাপিয়েছে, মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এখন আদালতকে হুকুম দিয়ে গণহারে সাজা দেওয়া হচ্ছে। আসলে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলকে নির্মূল করে চিরদিন ক্ষমতা আকঁড়ে রাখেতে চান। কিন্তু জনগণ তা হতে দেবে না। তিনি অবিলম্বে ডামি নির্বাচন বন্ধ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানান।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *