একদিকে দাবানল, অন্যদিকে তুষারঝড়; বিপরীতমুখী দুই প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র। কোনোভাবেই সামাল দেয়া যাচ্ছে না পরিস্থিতি। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, জলবায়ুগত একাধিক পরিবর্তন কাজ করে এমন বিপরীতমুখী চরম ভাবাপন্ন অবস্থার পেছনে।
এই সময়ে দেশটির দুই প্রান্তে আবহাওয়ার চরম ভাবাপন্ন দুই রূপের জন্য বায়ুমন্ডলীয় বিভিন্ন ঘটনাকে দায়ী করছেন আবহাওয়াবিদরা। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশী আলোচিত জেট স্ট্রীম। বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তর-ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চগতির বায়ুপ্রবাহই জেট স্ট্রীম।
একই সাথে একই অঞ্চলে ভিন্ন ধরনের আবহাওয়ার কারণ মূলত এই বায়ুপ্রবাহের ঢেউ খেলানো গড়ন। এই গড়নের কারণে একদিকে তৈরি হয় উচ্চচাপ; অন্যদিকে নিম্নচাপ। ফলে, একই সাথে অঞ্চলের একদিকে দাবানল ও অন্যদিকে দেখা দেয় তুষারপাতের মতো ঘটনা।
আবহাওয়াবিদ জিম ফোয়েরস্টার বলেন, ঢেউয়ের গড়নের উচু অংশকে বলা হয় রিজ আর নিচু অংশকে বলা হয় ট্রাফ। রিজ অংশে বাতাস উষ্ণ হয়ে দ্রুত গতিতে উঠতে শুরু করে উপরে। ফলে নিচের ঠাণ্ডা বাতাসের সাথে হয় সংঘর্ষ। কমে যায় বাতাসের আর্দ্রতা। অন্যদিকে, ঢেউয়ের নিচু অংশে বায়ু উষ্ণতা হারিয়ে হতে শুরু করে আর্দ্র। দ্রুত গতিতে নামতে শুরু করে নীচে। ফলে তৈরি হয় নিম্নচাপ।
জেট স্ট্রীমের কারণেই তৈরি হতে পারে জলবায়ুগত আরেক পরিস্থিতি; যার নাম অ্যাটমোস্ফিয়ারিক ব্লকিং। জেট স্ট্রীম এর ঢেউ খেলানো গড়ন যদি দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়, তখন তাকে বলা হয় অ্যাটমোস্ফিয়ারিক ব্লকিং। এর কারণে, একই স্থানে দীর্ঘদিন বিরাজ করে উচ্চচাপ কিংবা নিম্নচাপ। যেকারণে, আরও বেড়ে যায় চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়ার ঝুঁকি।
তাছাড়া, এল নিনো ও লা নিনার প্রভাবেও ঘটে এমন ঘটনা। প্রশান্ত মহাসাগরের তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধিকে ইঙ্গিত করে এলো নিনো- লা নিনা। সর্বোপরি, জলবায়ু পরিবর্তনই এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রধান কারণ বলে মনে করেন আবহাওয়াবিদরা।
গত ৫ জানুয়ারি থেকে ভয়াবহ তুষারঝড়ে কুপোকাত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ অঞ্চল। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সড়ক দুর্ঘটনা, শিডিউল বিপর্যয়, প্রাণহানিসহ সব মিলিয়ে বিপাকে লাখ লাখ মানুষ।
অন্যদিকে, পশ্চিমাঞ্চলে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পুড়ছে হাজার হাজার একর জমি। ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল বলা হচ্ছে একে।