রাজধানীর যাত্রাবাড়ির পালোয়ান পরিবার প্রায় ৩৫ বছর ধরে বিনামূল্যে কাফনের কাপড় দিয়ে অসহায় পরিবারের মানুষদের সেবা করছেন। বিনামূল্যে যে কেউ নিতে পারেন তাদের কাছ থেকে। বাবা যে পথ তৈরি করেছেন, সে একই পথে হেঁটেছেন মেয়েও। অর্থকষ্টে শেষযাত্রার বিষয়েও যারা দুঃশ্চিন্তায় থাকেন, তাদের পাশে দাড়াতে পেরে কিছুটা হলেও খুশি পরিবারটি।
ডেমরার মাতুয়াইলগামী সড়কের পাশেই বসবাস এই দম্পত্তির। যে কারোও নজর কাড়ে বাড়ির সামনের সাইনবোর্ডটি দেখে। ১৯৭৯ সালে এ কাজে অসহায়দের সহায় হয়ে এগিয়ে আসেন প্রয়াত আইনজীবী আব্দুল লতিফ পালোয়ান। পিতার মৃত্যুর পর তা জারি রেখেছেন তার কন্যা সিফাত।
কোটি মানুষের এই শহরে মৃতদেহ দাফনের খরচ পড়ে যায় দশ হাজার টাকারও বেশি। এই অর্থ যোগাতে অনেকেরই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে।
স্বেচ্ছাসেবী সিফাত ই ফেরদৌস বলেন, অনেকেই রেফারেন্সের মাধ্যমে আসলে আবার এমনকি কেউ মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে আসলে সঙ্গে সঙ্গে নাম ঠিকানা লিখে কাফনের কাপড় দিয়ে দেয়। মানুষদের কোনোধরণের অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে দেয় না যাতে কষ্ট না পায়।
সিফাত বলেন, ছেলেদের দাফনের ক্ষেত্রে কাফনের কাপড় দরকার হয় ৭-৮ গজ। এক্ষেত্রে আমি একটু বেশি করেই দেয়। আর মেয়েদের জন্য ৫ গজের দরকার হয়। মেয়েদের কাপড়টা আবার কেটে দিতে হয়। এই কাজটা আমি পারি। মাঝেমধ্যে বাসার পাশের কিছু ভাই-বোন এসে সাহায্য করে।
তিনি চাইলে পারতেন বাহারী পোশাক কিংবা আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন করতে কিন্তু তার বিপরীত বাবার দেখানো পথটিকেই ভালোবেসেছেন মেয়ে সিফাত। এই কাজে সঙ্গে পেয়েছেন তার স্বামীকেও। তাদের জমানো টাকা দিয়েই চলছে এই কার্যক্রম।
তিনি বলেন, নিজের ছোটো-খাটো শখ বিসর্জন দিয়ে নতুন কাপড় ৫টা না কিনে যদি ১টা কিনি তাহলে আমার কাফনের কাপড়ের টাকা হয়ে যায়। ৫০০০-৬০০০ টাকায় আমার সহজেই ৪০-৫০ গজের কাফনের কাপড় কিনতে পারি।
সিফাতের স্বামী ইসমাঈল জবিউল্লাহ শরীফ বলেন, এই কাজটাকে আমি আল্লাহর নিয়ামত বলতে পারি। এই কাজ করতে দেখতাম আমার শ্বশুরকে করতে। তিনি কাফনের কাপড় কিনে অসহায় পরিবারের মানুষদেরকে দান করতেন। এটা আসলে ভাগ্যের ব্যাপার।
এ কাপড়ে নিজেকেও একদিন ধরনীর মায়া ছেড়ে যেতে হবে অনন্তের পথে। তাইতো সিফাত চান, তার সন্তানেরাও ভরসা হয়ে উঠুক অর্থহীনের। তার মৃত্যুর পরও বজায় থাকুক পারিবারিক এই রীতি।