আল্লাহর নামে কটূক্তি; রাখাল রাহার শাস্তির দাবিতে ১৫০ আলেমের বিবৃতি

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-এর পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটির অন্যতম সদস্য রাখাল রাহা (সাজ্জাদুর রহমান) আল্লাহ ও নবীর শানে ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় তার শাস্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১৫০ আলেম।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) শীর্ষ আলেমের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে আলেমরা বলেন, রাখাল রাহা মহান আল্লাহর শানে চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করে সম্প্রতি ফেসবুকে একটি পোস্ট প্রকাশ করেন (পরিস্থিতির চাপে পড়ে তিনি পরবর্তীতে পোস্টটি মুছে ফেলেন, যা নিজেই স্বীকার করে আরেকটি পোস্ট দিয়েছে)। এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের ওপর আঘাত করেছেন, যা দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।

তারা বলেন, এই ধরনের বক্তব্য শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি পরিকল্পিতভাবে ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি, সামাজিক বিভাজন উসকে দেওয়া এবং জাতীয় স্থিতিশীলতা বিনষ্টের একটি ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা বলেই প্রতীয়মান হয়। বিশেষত, সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ধারাবাহিকভাবে একই ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। রাখাল রাহার আগে কথিত কবি সোহেল হাসান গালিবও রাসুলুল্লাহ কুরুচিপূর্ণ ও ঘৃণ্য মন্তব্য করেছেন, যা দেশের ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

আলেমরা বলেন, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং সুসংগঠিত পরিকল্পনার অংশ বলে প্রতীয়মান হয়, যেখানে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সামাজিক উত্তেজনা ও সংঘাত সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে। আমরা মনে করি, এই ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতাগুলো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

এর আগে শিক্ষাক্ষেত্রেও রাখাল রাহা বিভিন্ন বিতর্কিত সংশোধন ও পরিবর্তনের মাধ্যমে ইসলামী সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং জাতীয় মূল্যবোধের প্রতি অবমাননাকর দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য, নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বইতে ‘আদিবাসী’ গ্রাফিতি সংযোজনের মাধ্যমে তিনি নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেন, যা দেশের সামাজিক স্থিতিশীলতাকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলেছিল।

বাংলাদেশের আলেম সমাজ রাখাল রাহার সাম্প্রতিক ধৃষ্টতাপূর্ণ ফেসবুক পোস্টের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং সরকারের কাছে জোরালোভাবে দাবি করেন যে, রাখাল রাহাকে (সাজ্জাদুর রহমান) অবিলম্বে এনসিটিবির পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটি থেকে অপসারণ করতে হবে।

তার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া বক্তব্যের জন্য প্রচলিত আইনের আওতায় দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো শক্তিশালী করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্ম অবমাননা এবং উসকানিমূলক প্রচার প্রতিরোধে বিদ্যমান আইন ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টান্ত পর্যালোচনা করে বাংলাদেশেও উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা জরুরি।

বিবৃতিদাতারা হলেন, আল্লামা সাইয়্যেদ কামালুদ্দীন জাফরী, প্রফেসর ড. এবিএম হিজবুল্লাহ, মুফতি মুহা. কাজী ইব্রাহীম, মাওলানা লিয়াকত আলী, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরি, ড. খলিলুর রহমান আল মাদানী, মাওলানা শরীফ মুহাম্মাদ, ড. গিয়াসউদ্দীন তালুকদার, মাওলানা খুবাইব বিন তায়্যিব (জিরি), মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, ড. মানজুরে এলাহি, ড. আবুল কালাম আজাদ বাশার, ড. মুহাম্মদ গোলাম রববানী, ড. মীর মনজুর মাহমুদ, প্রফেসর ড. সায়্যেদ মাকসুদুর রহমান, প্রফেসর ড. মো. মুস্তাফিজুর রহমান, প্রফেসর ড. মুখতার আহমেদ, হাফেজ হাবিবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল প্রমুখ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *