‘আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, দেশ বিক্রি করে রাজনীতি করি না’ মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। কারণ নিজের সম্পদ অন্যের হাতে তুলে দিতে চাইনি। গ্যাস বিক্রি করতে চাইনি। বাংলাদেশ বিক্রি করে যে রাজনীতি করতে হয়, সে রাজনীতি আমি করি না। আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় যাব না। গতকাল শনিবার কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, নেত্রকোণা, রাঙ্গামাটি, বরগুনার বামনা ও পাথরঘাটার নির্বাচনী সমাবেশে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে যোগ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৩ সালে যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছিল, আবারও তাই শুরু করেছে। রেলে আগুন দিচ্ছে, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করছে। বিএনপির নেতা কে এমন প্রশ্নও করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, দলটির শীর্ষ দু’জনই সাজাপ্রাপ্ত আসামি। ভাই-বোনের রিকোয়েস্টে (অনুরোধে) খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে বাড়িতে থাকতে দিয়েছি। সরকার মানবিকতা দেখিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটা একটা সন্ত্রাসী দল। জামায়াত যুদ্ধাপরাধী দল। এই যুদ্ধাপরাধী এবং সন্ত্রাসীদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে হবে। দেশে তাহলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, উন্নয়নের ধারা তখনই অব্যাহত থাকবে যখন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তার মনের মতো প্রার্থী বেছে নেবে এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে। শেখ হাসিনা বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে, উন্নয়নের ধারাও অব্যাহত রাখতে হবে।
ভোট জনগণের সাংবিধানিক অধিকার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সামনে ইলেকশন, এই নির্বাচন আমরা এবার উম্মুক্ত করে দিয়েছি। তার কারণ আমরা চাই জনগণ অংশগ্রহণ করুক, শান্তি মতো ভোট দিক। তিনি বলেন, সকলে জনগণের কাছে যাবে, জনগণ যাকে ভোট দেবে সেই নির্বাচিত হবে। আমি চাই নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হোক। জনগণের যে ভোটের অধিকার সেটা তারা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারুক। গণতন্ত্রকে আমরা সুরক্ষিত করতে চাই। তিনি আরো বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে, গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থা থাকলে দেশে উন্নতি হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি জায়গায় আমরা উন্নয়ন করেছি। উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে। আজ বিএনপি নির্বাচনে আসেনি। তারা ভোট ঠেকানোর নামে ২০১৩-১৪ সালে যে অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল, সেই ভয়ংকর রূপ নিয়ে আবার মাঠে নেমেছে। তিনি বলেন, মাত্র কয়েকদিন আগে রেলে আগুন দিলো, ফিশপ্লেট খুলে ফেলল, রেলের বগি পড়ে সেখানে একজন মারা গেল। বাসে আগুন দিচ্ছে, ঘুমিয়ে থাকা হেলপার মারা গেল। ঠিক এভাবে আবার তারা অগ্নি সন্ত্রাস শুরু করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের মানুষের ওপর বিএনপি-জামায়াত যেভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করেছিল, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে তুলনা করা যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, রেলে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করা, একটা মা তার শিশুকে কোলে নিয়ে বসে আছে, সেখানে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে কঙ্কাল করেছে, কোনো মানুষের ভেতরে মনুষ্যত্ব থাকলে এ ঘটনা ঘটাতে পারে না।
এ সময় বিএনপির নেতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপির নেতা কে? সেটাই প্রশ্ন, দুইটাই তো সাজাপ্রাপ্ত। এতিমের অর্থ আত্মসাৎ এবং বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে আজ খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তারপরও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে, তার বোন-ভাই যখন আমাদের অনুরোধ করেছে, আমরা তার সাজা স্থগিত করে তাকে বাড়িতে থাকতে দিয়েছি। তারেক জিয়া আমাকে গ্রেনেড হামলা করে মারতে চেয়েছিল, বোমা মেরে মারতে চেয়েছিল, গুলি করেছে, তারপরও তার জন্য আমরা এটুকু মানবিকতা দেখিয়েছি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বিএনপির নেতা-কর্মীর উদ্দেশ্যে বলেন, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক এলে মুচলেকা দিয়ে আর কখনো রাজনীতি করবে না বলে নাকে খত দিয়ে বিদেশে পাড়ি দেয়। বিদেশ থেকেও হুকুম করছে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারার। বিএনপির যারা নেতা-কর্মী আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়, পাপের ভাগিদার আপনারাই হবেন, তারেক জিয়া হবে না। ও (তারেক রহমান) তো ওখানে জুয়া খেলে ভালো আছে আর হুকুম দিচ্ছে। আপনারা (বিএনপির নেতাকর্মী) নাচেন, কার জন্য নাচেন? জীবনে কোনো দিন সে তো দেশে আসে নাই, মা মরে মরে, তাও তো দেখতে আসে না। এত সাহস থাকলে একবার দেশে এসে দেখুক, এ দেশের মানুষ এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেবে।
আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় হবে আশা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট চাই, সবাই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবার জনগণের সেবা করার সুযোগ দেবেন।
শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণভাবে একবারই ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিল, সেটা ২০০১ সালে, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছি।
কাউকে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দিবেন না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে আর আমরা কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না। ওই সন্ত্রাসী বিএনপি আর যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের হাতে এদেশ কোনোদিনেই নিরাপদ নয়। কারণ এরা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। কাজেই এদের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।