ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের ডাক ওলামায়ে কেরামের

সর্বতোভাবে ইসরাঈলকে বয়কটের ডাক ওলামায়ে কেরামের। ফিলিস্তিনে ইতিহাসের নিকৃষ্ট অপরাধ সংগঠিত করে চলেছে ইসরায়েল। যা মানবসভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায়। তাই মত পথ নির্বিশেষে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের পক্ষে এবং দখলদার ইসরাইয়েলের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানানো সকলের ঈমানী ও মানবিক দাবি বলে মন্তব্য করেন ওলামায়ে কেরাম।

শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল নয়টায় রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের মুক্তিযুদ্ধ মিলনায়তনে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ আয়োজিত মসজিদুল আকসার পবিত্রতা রক্ষা, স্বাধীন ফিলিস্তিনের স্বকীয়তা রক্ষা ও দখলদার ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে মুসলিম উম্মাহর করণীয় শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।

বক্তারা আরো বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলী হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশে কার্যকর কোনো প্রতিবাদ না হলেও এখন দেরিতে হলেও তা শুরু হয়েছে। তবে এ আন্দোলন আরো জোরালো করতে হবে। ফিলিস্তিনী পণ্য বয়কটের ব্যাপারে এক বিন্দু দ্বিধা করার
কোন সুযোগ নেই।

ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করেছে। যা আমাদের দেশে হয়নি। মুদি দোকানে ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের তালিকা টানিয়ে দিয়ে এটা কার্যকর করা যেতে পারে।

ফিলিস্তিন ইস্যুতে লজ্জিত জানিয়ে শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে দৃশ্যমান কোনো প্রতিবাদ করেনি। এখন দেরিতে হলেও তা শুরু হয়েছে। তবে এ আন্দোলন আরো জোরালো করতে হবে। আর মনের মধ্যে মসজিদুল আকসার প্রতি সবসময় টান অনুভব করতে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি অফিসে মসজিদুল আকসার ছবি টানাবো। এটা যখনই দেখবো, তখন যাতে আকসার প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়। বাচ্চারা মসজিদুল আকসার সম্পর্কে জানতে পারে।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা নূরুল হুদা ফয়জীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমম । বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করিম, মধুপুর পীর মাওলানা আব্দুল হামিদ, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুর রহমান।

সেমিনারে দেশের বাহির থেকেও বিভিন্নভাবে যুক্ত হয়েছেন কয়েকজন সম্মানিত অতিথি। গুগল মিটে লাইভ বক্তব্য রাখেন ফিলিস্তিন ওলামা পরিষদ প্রধান ড. নওয়াফ তাকরুরি, অডিও বার্তা প্রেরণ করেন ভারত দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম মাওলানা আবুল কাসেম নোমানী ও পাকিস্তান ওলামায়ে কেরামের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব মাওলানা ইলিয়াস গুম্মান।

সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন শায়খ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, পটিয়ার মাদরাসার মহাপরিচালক মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নায়েবে আমীর মাওলানা জোনায়েদ আল হাবীব, বরিশাল মাহমুদিয়া মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব, বনশ্রী মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ এর উপষ্টো মাওলানা ফরিদ উদ্দিন আল মোবারক, জামিয়াতুস সুন্নাহ মাদরসার মুহতামিম মাওলানা নেয়ামত উল্লাহ আল ফরিদি, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শায়খ আহমাদুল্লাহ, বিশিষ্ট ওয়ায়েজ মাওলানা হাসান জামিল, মাওলানা ড. বেলাল নূর আজীজি, বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও ধর্মীয় আলোচক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বাশার, শাহ আহমদ শফি সাহেব রহ. এর সাহেবজাদা মাওলানা আনাস মাদানী, আফতাব নগর মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মোহাম্মদ আলী কাসেমী, চিন্তক আলেম মুফতি লুৎফর রহমান ফরায়েজী, বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও ধর্মীয় আলোচক আবু ত্বহা মোহাম্মদ আদনান, বাংলাশে খেলাফত মজলিস এর যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, বাহাদুরপুরের পীর মাওলানা হানযালাহ, যুব নেতা আতিকুর রহমান মুজাহিদ ও ছাত্র নেতা শরিফুল ইসলাম রিয়াদ।

সেমিনার সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুফতি রেজাউল করীম আবরার, মুফতি শামসুদ্দোহা আশ্রাফি, মাওলানা ইসমাইল সিরাজী আল-মাদানী, মফতি আবদুল আজিজ কাসেমী।
মূল প্রবন্ধ লেখেন কবি লেখক ও গবেষক শায়খ মূসা আল হাফিজ। প্রবন্ধ পাঠ করেন মাওলানা নূরুল করীম আকরাম।

সেমিনার থেকে ৭ দফা ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।

১. মুসলমানদের প্রথম কেবলা মসজিদুল আকসার হেফাজত এবং সন্ত্রাসী দখলদার ইহুদিবাদী অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের কবল থেকে ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি উদ্ধারের জন্য বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

২. মুসলমানদের পবিত্র স্থাপনা এবং পবিত্র ভূমিসমূহ সুরক্ষার জন্য বিশ্বের
মুসলিম রাষ্ট্রগুলির সমন্বয়ে সম্মিলিত সামরিক বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ
গ্রহণ করতে হবে।

৩. আজকের সেমিনার বাংলাদেশের সর্বস্তরের ওলামা মাশায়েখ এবং বাংলাদেশের প্রিয় মানবতাবাদী গণমানুষের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনের গাজ্জায় বর্বর ইসরাইলি হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং গাজ্জার হামাস সহ সকল প্রতিরোধ যোদ্ধার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি প্রকাশ করছে।

৪.আজকের সেমিনার ইহুদীবাদি ইজরাইলের অর্থনৈতিক স্বার্থে আঘাত হানতে সকল
ইসরাইলি ও ইহুদী পণ্য বর্জন করার জন্য বিশ্ব মুসলিমের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে দেশের সকল ওলামায়ে কেরাম এবং মসজিদের ইমাম খতিবগণকে মসজিদে মসজিদে মুসল্লীগণকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। পাশাপাশি বিকল্প দেশীয় পণ্য ব্যবহারে জনগণকে আহবান জানাচ্ছে।

৫. এই সেমিনার যেসব রাষ্ট্র অবৈধ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইলকে সামরিক, অর্থনৈতিক,  রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা করছে; তাদের প্রতি নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করছে। বিশেষ করে মুসলিম রাষ্ট্রসমূহকে অবৈধ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র   ইসরাইলের সঙ্গে যে কোন ধরনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পর্ক ছিন্নের আহ্বান জানাচ্ছে।

৬. ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার লড়াইয়ে শহীদ, আহত, বাস্তুহারা নিপীড়িত মজলুম
মুসলিমদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে বিশ্ব মুসলিমের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।

৭. মসজিদে আকসার সুরক্ষা এবং ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি দখলদার ইহুদিদের
কবল থেকে পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব শুধু ফিলিস্তিনি মুসলমানদের নয়; বরং এ
দায়িত্ব গোটা বিশ্বের সকল মুসলমানদের।

উল্লেখ্য, চলতি বছেরর ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের ওপর হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৮ হাজারের বেশি শিশু রয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *