সিইসি প্রথমে বললেন ২৮ পরে ৪০ শতাংশ

স্টাফ রিপোর্টারঃ  নৌকার প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ছাড়া বাকি প্রার্থীদের এজেন্ট দেখেননি বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। গতকাল নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সিইসি।
যে কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন সেই কেন্দ্রের প্রসঙ্গ টেনে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আসলে মনে হয়েছে প্রতিদ্ব›দ্বী বা প্রতিপক্ষ প্রার্থী যারা তাদের পোলিং এজেন্ট দেয়ার সামর্থ্য নেই। পোলিং এজেন্টের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, আমরা খুব জোড় দিয়ে বলেছিলাম প্রতিদ্ব›দ্বীতামূলক ভোট হতে হলে কেন্দ্রে অবশ্যই প্রত্যেকটা প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট থাকতে হবে। আমি যেগুলো পেয়েছি সবাই একই দলের, নৌকার প্রার্থীর। বাদ -বাকি প্রার্থীদের কোনো লোকজন দেখি নাই।
পরে ভোটগ্রহণ শেষে বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সিইসি। সংবাদ সম্মেলনে শুরুতে সিইসি ভোটের হার ২৮ শতাংশের মতো উল্লেখ করে পরে তা সংশোধন করে বলেন এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। আরও হয়তো বাড়তে পারে। আবার নাও পারে। এর আগে বিকাল ৩টার ব্রিফিংয়ে ২৭ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানান নির্বাচন কমিশন সচিব। অর্থাৎ শেষ এক ঘন্টায় ভোট পড়েছে ১৩ শতাংশ। ভোটের হারের প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে সিইসি বলেন, এখনো নিশ্চিত করে পার্সেন্টেজের হিসাব বলা যাবে না। অ্যাজ ইট ইজ আমরা যেটা পেয়েছি ২৮ শতাংশের মতো। পরে সিইসি’র পাশে থাকা সচিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা সিইসিকে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানান।
এই নির্বাচন নিয়ে স্বস্তির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বড় জিনিসটা হচ্ছে মোটামুটিভাবে নির্বাচনের যে আশংকাটা আমাদের যে একটা শংকা ছিল ভোটার উপস্থিতি হয়ত আরও অনেক কম হবে। এটার কারণ হচ্ছে একটি জাতীয় নির্বাচনে বড় একটি পক্ষ নির্বাচন বর্জন করে পরোক্ষভাবে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে থাকেন পরোক্ষভাবে। তার কিছু সিম্পটম হয়তো ওটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। কিন্তু কয়েকটি কেন্দ্রে অগ্নিসংযোহের ঘটনা ঘটেছে। গতদিন একটি ট্রেনে আগুনের মত মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। অনেকের মনেই এগুলো দেখে একধরণের শঙ্কা জাগ্রত হতে পারত যে নির্বাচনটা সহিংস হবে। কিন্ত আমরা দেখেছি অনেক ভোটার স্বতস্ফ‚র্তভাবে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের চেষ্টা করেছে।
সিইসি বলেন, ২৯৯ আসনে নির্বাচন হয়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে সর্বক্ষন খোঁজ খবর রেখেছিলাম। আমি কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরেছি। আমার সহকর্মীরাও ঘুরেছে। আমরা যেগুলো দেখেছি পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ ছিল। আমরা পরে টিভিতে দেখেছি। সহিংসতার ঘটনা গুরুতর কিছু ঘটেনি। এজন্য কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করতে হয়েছে। একজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে হয়েছে। একটি বিষয় স্বস্তিদায়ক নির্বাচনী সহিংসতায় কোন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। কিছু আহত হতে পারে। তবে কিছু জায়গায় অনিয়ম হয়েছে। কিছু জায়গায় সিল মারা হয়েছে। কিছু ফলস নিউজও এসেছিল। চেক ক্রস চেক করে নিশ্চিত হওয়ার পর রিটার্নিং অফিসারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সিইসিসহ অনান্য নির্বাচন কমিশনাররা সারাদেশে চষে বেড়ানোয় ভোট নিয়ে আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মিটিংয়ের সময় তাদের (প্রার্থীরা) অনাস্থার কথা বলেনি। তারা কিন্তু প্রশাসন ও পুলিশের ব্যাপারে খুব সামান্য দু চারটি অভিযোগ ছাড়া অধিকাংশই আমাদের বলেছেন প্রশাসনের আচরণে আমরা পক্ষপাতিত্ব দেখছি না। আর যাদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ পেয়েছি তাদের উইথড্র করেছি।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনটা কতটা স্বস্তিদায়ক ছিল? জানতে চাইলে সিইসি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনকে সম্ভব সেটা আমরা আগেও বলেছি। কিছুটা চ্যালেঞ্জ থাকে। সেক্ষেত্রে আমরা দেখেছি দলীয় সরকারের অধীনে, সরকারের যে পলিটিকাল উইল অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করার সেটা ছিল। সেই সাথে সরকারের তরফ থেকে আন্তরিকতা ছিল। নিশ্চয়তা বিধান করার কথা ছিল, প্রকাশ্যে বলা হয়েছিল নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে যে সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন ছিল, সেই সহযোগিতা পেয়েছিলাম বলে এটাকে বলা হয় সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয়েছে।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বোঝা যাবে ফলাফলের পরে। এটা আপনারা বলেন। জনগণ কি বলেন। গণমাধ্যমে কিভাবে উঠে আসে। ওর উপর নির্ভর করবে, আমরা বলতে পারবো নির্বাচনটা গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি তো গ্রহণযোগ্য হয়েছে এখনো বলিনি। ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পরে চ‚ড়ান্ত মূল্যায়নটা যখন হবে। আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে চার নির্বাচন কমিশনার, সচিবসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *