মাহে রমজান জুড়ে যে দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়বেন

ক্ষমার মহান বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। মুসলমানদের জন্য রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস এটি। রোজা শুধু আল্লাহর জন্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেভাবে নিজের সঙ্গে রোজার সম্পর্ক ঘোষণা করেছেন একইভাবে সব ইবাদত-বন্দেগি থেকে রোজাকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছেন।

যেমন তিনি এক হাদিসে কুদসিতে বলেন, ‘মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম, তা শুধু আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান দেব (মুসলিম -২৭৬০)।’ এ হাদিস দ্বারা আমরা অনুধাবন করতে পারি, নেক আমলের মাঝে রোজা রাখার গুরুত্ব আল্লাহর কাছে কতটা বেশি।

তাই, সাহাবি আবু হুরাইরা (রা.) যখন বলেছিলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে অতি উত্তম কোনো নেক আমলের নির্দেশ দিন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তুমি রোজা রাখো। কারণ এর সমমর্যাদার আর কোনো আমল নেই।’ (নাসায়ি-২৫৩৪)

রোজার এত মর্যাদার কারণ কী, সেটা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভালো জানেন। তবে, আমরা যা দেখি তা হলো, রোজা এমন একটি আমল, যাতে লোকদেখানো ভাব থাকে না। এটি বান্দা ও আল্লাহর মধ্যকার একটি অতি গোপন বিষয়।

রোজা পালনসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে অনুসরণ করাই সব মুসলিমের কর্তব্য। এ মাসে প্রতিটি ইবাদতের প্রতিদান বহুগুণে বেড়ে যায়। রোজায় রাসুল (সা.) আমাদের অনেকগুলো দোয়া শিখিয়েছেন।

হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ইফতারের সময় রোজাদারের জন্য এমন একটি দোয়া রয়েছে যা ফিরিয়ে দেয়া হয় না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৫৩; তাবরানি, হাদিস : ১২২৯-১২৩০/২; বায়হাকি, হাদিস : ৩৯০৫)

হাদিস অনুযায়ী এবং ইফতারের আগে রোজাদারদের দুর্বল অবস্থায় থাকার পরিপ্রেক্ষিতে ইফতারের আগে দোয়া করলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই রোজাদারের উচিত, সারাদিন রোজা অবস্থায় দোয়া করার সুযোগ হাত ছাড়া না করা। বিশেষ করে ইফতারের আগের সময়টিতে দোয়ার জন্য বেশি গুরুত্ব দেয়া। এ সময় রোজদার যা দোয়া করবেন তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ইফতারের আগমুহূর্তে বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়া-

 – اَسْتَغْفِرُ اللهَ الْعَظِيْم – اَلَّذِىْ لَا اِلَهَ اِلَّا هُوَ اَلْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَ اَتُوْبُ اِلَيْهِ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللَّهِ الْعَلِىِّ الْعَظِيْم

উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম, আল্লাযি লা ইলাহা ইল্লাহু আল-হাইয়্যুল ক্বইয়্যুম, ওয়া আতুবু ইলাইহি লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম।

– اَلْحَمْدُ للهِ اَللّهُمَّ إنِّيْ أسْئَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْئٍ أنْ تَغْفِرَلِيْ

উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিরাহমাতিকাল্লাতি ওয়াসিআত কুল্লা শাইয়িন আন তাগফিরলি।

অর্থ : সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য। হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে তোমার সর্ববেষ্টিত রহমতের উসিলায় প্রার্থনা করছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। (ইবনে মাজাহ) রমজান জুড়ে বিশ্বনবির এ দোয়াগুলো বেশি বেশি করা জরুরি।

আরও একটি দোয়া হচ্ছে- اَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇﻧَّﻚَ ﻋَﻔُﻮٌّ ﺗُﺤِﺐُّ اﻟْﻌَﻔْﻮَ ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﻲ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আ’ন্নি।

সাইয়্যিদুল ইসতেগফারও পড়া যেতে পারে-
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি; ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আ’হদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাত্বা’তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা’তু আবুউলাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া; ওয়া আবুউ বিজামবি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।

অর্থ: হে আল্লাহ তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।

যে ব্যাক্তি দিনের (সকাল) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এ ইস্তিগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হওয়ার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যাক্তি রাতের (প্রথম) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এ দু’আ পড়ে নেবে আর সে ভোর হওয়ার আগেই মারা যাবে সে জান্নাতী হবে। (বুখারী ৫৮৬৭)

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *