পোশাক খাতে নিষেধাজ্ঞা দিলে তারাও সংকটে পড়বে

স্টাফ রিপোর্টারঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ না করলেও পোশাক খাতে কোনো দেশ নিষেধাজ্ঞা দিলে তারাও সংকটে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবন থেকে ৬টি নির্বাচনী জনসভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, পোশাক খাতে কোনো দেশ বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে তারাও সংকটে পড়বে। এবারের ভোটে কোনো গণ্ডগোল চাই না। দেশের মানুষকে বিএনপি-জামায়াতের দুর্বৃত্তপরায়ণতার জবাব দিতে হবে। এখানে কেউ কাউকে বাধা দিতে পারে না। কোনো রকম সংঘাত আমি চাই না। আমি চাই এই নির্বাচন সত্যিকারভাবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে। আর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রা সুগম হবে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য একান্তভাবে জরুরি মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে অনেক রকম খেলা অনেকে খেলতে চায়। যারা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না, জয় বাংলা সেøাগান যারা নিষিদ্ধ করে, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ যারা নিষিদ্ধ করে দেয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যারা ধ্বংস করে তারা দেশটাকেই ধ্বংস করবে। দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে। সেটি যেন করতে না পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে আমি যখন গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হইনি, তখন ষড়যন্ত্রের শিকার হই। ক্ষমতায় আসতে পারিনি। গ্যাস বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় বিএনপি-জামায়াত জোট আসে। ক্ষমতায় এসেই তারা দুর্নীতি, লুটপাট, জঙ্গিবাদ, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অকাট্য নির্যাতন শুরু করে। তাদের দুর্নীতি এমন পর্যায়ে চলে যায়, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও আরেক দিকে তারেক হাওয়া ভবন খুলে দুর্নীতির আখড়া গড়ে তোলে। ব্যবসা-বাণিজ্য সর্বক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করে। যার ফলে দেশে চরম অরাজকতার সৃষ্টি হয়। তারা জানত জনগণ তাদের ভোট দেবে না, প্রত্যাখ্যান করবে, তখন তারা এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারলিস্ট তৈরি করে। সেভাবে নির্বাচন করার প্রচেষ্টা নেয়। সেখানে তারা ব্যর্থ হয়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা দেশে একটি সত্যিকারের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আর বিএনপি চায় কারচুপির নির্বাচন। জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল খালেদা জিয়া। থাকতে পারেনি। ভোট চুরি করলে জনগণ মেনে নেয় না। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার পতন ঘটে। ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হয়। তারপর পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু ওদের শিক্ষা হয়নি। তাই আবারও ২০০১ সালে ভোট কারচুপি, ভোট চুরি, জনগণের ভাগ্য নিয়ে খেলা শুরু করে। তাদের দুঃশাসনের কারণে দেশে ইমার্জেন্সি (জরুরি অবস্থা জারি) হয়।

আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই ক্ষমতায় আসে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে একটানা ক্ষমতায় আছি বলে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন করতে পেরেছি। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্টসহ অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এবং শিক্ষার উন্নয়ন করতে পেরেছি। আমরা বাংলাদেশকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ করতে পেরেছি। আমরা বেকারত্বের হারও কমিয়ে তিন শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছি। দেশে আমরা ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছি। তিনি বলেন, সারাদেশ আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে একটা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আসতে আমরা পেরেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো বিএনপি-জামায়াতের চরিত্রটা হচ্ছে দুর্নীতি করা আর মানুষ খুন করা। তারা অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করে। এর থেকে জঘন্য কাজ আর কিছু হতে পারে না। ২০১৩-১৪ সালের মতো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত আবার ‘ভয়াল রূপ’ নিয়ে হাজির হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস, ট্রেনে আগুন দেওয়ায় মা-শিশু পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। এই দৃশ্য সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। শুধু তাই নয়, রেললাইনের ফিশপ্লেট খুলেছে, বগি ফেলে দিয়ে এক্সিডেন্ট ঘটিয়ে মানুষ মারার ফাঁদ পাতে তারা। যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়। চিফ জাস্টিসের বাড়িতে হামলা করেছে, জাজেস কোয়ার্টারে হামলা করেছে। সাংবাদিকদের পিটিয়েছে। পুলিশকে কীভাবে পিটিয়ে মেরেছে আপনারা দেখেছেন। এই ধরনের জঘন্য কর্মকাণ্ড তারা করেছে।

দেশের মানুষকে এই দুর্বৃত্তপরায়ণতার জবাব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা নৌকায় ভোট দিয়ে, আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে এর জবাব দেবেন এবং উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখবেন, সেটাই আমরা চাই। আজকে বিভিন্ন জায়গায় আমাদের প্রার্থী আছে। সেই সঙ্গে আমরা এবার আমাদের নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমাদেরই সেøাগান ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো।’ কাজেই আপনাদের পছন্দমতো ভোট দেবেন। কিন্তু কোনোরকম গণ্ডগোল আমি চাই না। কোনোরকম কোনো দুর্ঘটনা বা কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব যেন না থাকে। সকলকেই সহনশীলতা দেখাতে হবে। নির্বাচনে যার যার ভোট শান্তিমতো দেবে এবং সেই পরিবেশটা আমাদের রক্ষা করতে হবে।

এদিন রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা জেলা, রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী জেলা ও মহানগর, ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল জেলা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, কুমিল্লা উত্তর-দক্ষিণ জেলা ও মহানগর এবং চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলায় নির্বাচনী জনসভা করে আওয়ামী লীগ। এর আগে ২০ ডিসেম্বর সিলেট থেকে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই দিন হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরানের (রহ.) মাজার জিয়ারতের পর দলের নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেন তিনি।

এরপর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন জেলায় নির্বাচনী জনসভা করছে আওয়ামী লীগ। এতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবন থেকে জনসভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *