স্টাফ রিপোর্টারঃ শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৪ জনের পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। এই মামলায় আগামী ১লা জানুয়ারি রায় ঘোষণা করবেন আদালত। গতকাল রাতে ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা রায় ঘোষণার জন্য এদিন ধার্য করেন। দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা যুক্তিতর্ক শেষে বিচারক এদিন ধার্য করেন। ড. ইউনূস এই দীর্ঘ সময় এজলাসে উপস্থিত ছিলেন। আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানি করেন এডভোকেট খুরশীদ আলম খান ও এডভোকেট মো. হায়দার আলী। যুক্তিতর্কের একপর্যায়ে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের পক্ষের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান আদালতকে বলেন, মাই লর্ড, এই মামলায় আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যেন অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এই ধরনের অপরাধ করতে সাহস না পায়। এটা একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
এটাই আমাদের চাওয়া। এর কিছুক্ষণ পরেই কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আরেক আইনজীবী হায়দার আলী যুক্তি তর্ক শুরু করেন। যুক্তিতর্ক চলার একপর্যায়ে বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা বলেন, লার্নেড, আপনার শেষ হয়েছে? শেষ করেন। সন্ধ্যা ৭টা ৪২ মিনিটে যুক্তিতর্কের একপর্যায়ে বিচারক আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনার আর কতোক্ষণ লাগবে? বিচারক তখন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলেন অনেক সময় হয়েছে। আমাদের শেষ করতে হবে। দ্রুত শেষ করুন।
জবাবে এই আইনজীবী বলেন, মাই লর্ড, এইতো প্রায় শেষ। আর ২০ মিনিট লাগবে। তখন বিচারক বলেন ঠিক আছে আপনি শেষ করেন।
রাত ৮টা ১ মিনিটে ড. ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মাই লর্ড, তারা মেঘনা ব্রিজের একটি কাগজ দিয়ে লম্বা যুক্তি দিচ্ছে। এটা মেঘনা ব্রিজের একটি টোলের কাগজ। মেঘনা ব্রিজের একটি রায়ের রেফার দিয়ে লেবার কোর্টের আইন পরিবর্তন করার ক্ষমতা প্রধান বিচারপতিরও নেই।
জবাবে বিচারক বলেন, সব ঠিক আছে। কিন্তু উচ্চ আদালতের রায় নিয়ে আমরা কথা বলতে পারি না। তখন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, ওটা মেঘনা ব্রিজের টোলের কাগজ নয়। ওটা উচ্চ আদালতের একটি রায়। দুইপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রাত ৮টা ১৬ মিনিটে বিচারক এজলাস ত্যাগ করেন। পরে ৮টা ২০ মিনিটে রায়ের দিন ধার্য করেন।
গতকাল বেলা ১১টা ৩০ মিনিট থেকে (দুই দফায় ৪৫ মিনিটের বিরতি দিয়ে) সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত টানা ৬ ঘণ্টা যুক্তি উপস্থাপন করেন ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন। যুক্তি উপস্থাপন শেষে এই আইনজীবী তার মক্কেলদের এই মামলা থেকে সসম্মানে খালাস চান। এরপর ৪০ মিনিট যুক্তি উপস্থাপন করে এই মামলার আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান ২০২১ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে ড. ইউনূসসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। যেখানে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। এই মামলার অপর আসামিরা হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান এবং দুই পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।