ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অ্যানেসথেসিয়া বন্ধ, মানতে হবে ১০ নির্দেশনা

নিবন্ধিত হাসপাতাল ও ক্লিনিক ছাড়া কোনো অবস্থাতেই চেম্বারে অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অ্যানেসথেসিয়া দেয়া যাবে না। এমন অফিস আদেশ জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদফতর এই অফিস আদেশ জারি করে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ অবেদনবিদ (অ্যানেসথেটিস্ট) ছাড়া কোনো ধরনের অস্ত্রোপচারও করা যাবে না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে ১০টি নির্দেশনা বা শর্ত জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনার ক্ষেত্রে এসব শর্ত অবশ্যই প্রতিপালন করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ১০ দফা শর্তের মধ্যে রয়েছে—

১. বেসরকারি ক্লিনিক/হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিকের লাইসেন্সের কপি ওই প্রতিষ্ঠানের মূল প্রবেশপথের সামনে দৃশ্যমান স্থানে অবশ্যই স্থায়ীভাবে প্রদর্শন করতে হবে।

২. সকল বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ ও সরবরাহের জন্য একজন নির্ধারিত দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা বা কর্মচারি থাকতে হবে এবং তার ছবি ও মোবাইল নম্বর দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে।

৩. যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতাল হিসেবে আছে কিন্তু শুধুমাত্র ডায়াগনস্টিক অথবা হাসপাতালের লাইসেন্স রয়েছে, তারা লাইসেন্সপ্রাপ্ত ছাড়া কোনোভাবেই নামে উল্লেখিত সেবা দিতে পারবে না।

৪. ডায়াগনস্টিক সেন্টার/প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির ক্ষেত্রে যে ক্যাটারগরিতে লাইসেন্স পেয়েছে শুধু সে ক্যাটাগরিতে নির্ধারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে। এর বাইরে কোনোভাবেই অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে না। ক্যাটাগরি অনুযায়ী প্যাথলজি/মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ও রেডিওলজি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে হবে।

৫. বেসরকারি ক্লিনিক/হাসপাতালের ক্ষেত্রে লাইসেন্সের প্রকারভেদ ও শয্যা সংখ্যা অনুযায়ী সব শর্ত বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

৬. হাসপাতাল/ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়োজিত সকল চিকিৎসকের পেশাগত ডিগ্রির সনদগুলো, বিএমডিসির হালনাগাদ নিবন্ধন ও নিয়োগপত্রের কপি অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে।

৭. হাসপাতাল/ক্লিনিকের ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের অপারেশন/সার্জারি/প্রসিডিউরের জন্য অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসককে সার্জনের সহকারী হিসেবে রাখতে হবে।

৮. কোনো অবস্থাতেই লাইসেন্সপ্রাপ্ত/নিবন্ধিত হাসপাতাল ও ক্লিনিক ছাড়া চেম্বারে অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অ্যানেসথেসিয়া দেয়া যাবে না। বিএমডিসি স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ অবেদনবিদ ছাড়া যেকোনো ধরনের অপারেশন/সার্জারি/ইন্টারভেনশনাল প্রসিডিউর করা যাবে না।

৯. সকল বেসরকারি নিবন্ধিত লাইসেন্সপ্রাপ্ত হাসপাতাল/ক্লিনিকে লেবার রুম প্রটোকল অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

১০. নিবন্ধিত/লাইসেন্সপ্রাপ্ত হাসপাতাল/ক্লিনিকে অপারেশন থিয়েটারে অবশ্যই অপারেশন থিয়েটার এটিকেট (শিষ্টাচার) মেনে চলতে হবে।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে (জে এস হাসপাতাল) খৎনা করার সময় আহনাফ তাহমিন নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। স্বজন ও পুলিশ সূত্র বলছে, চিকিৎসকেরা শিশুটিকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে অবেদন (অ্যানেসথেসিয়া) করে তার খৎনা করেন। তবে এরপর আর শিশুটির জ্ঞান ফেরেনি। পরে রাতে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এর আগে, গত মাসে রাজধানীর বাড্ডার সাঁতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খৎনার পর মৃত্যু হয় শিশু আয়ানের।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *