বছর ঘুরে আবার এসেছে ফেব্রুয়ারি মাস। আজ শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) মাসের প্রথম দিন। বাঙালির অধিকার রক্ষায় বরাবরই অস্ত্র ছিলো ভাষা। কখনও স্লোগান, কখনও পোস্টার, কখনও বুকে লিখে, কখনো বা আবার গ্রাফিতি হয়েছে প্রতিবাদের অস্ত্র হিসেবে। ১৯৫২ থেকে ২০২৪ যখনই অধিকার রক্ষার লড়াই হয়েছে তখনই অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে ভাষা। ট্রিগার চাপা বুলেট প্রাণ নিতে পারলেও প্রতিবাদের ভাষার কাছে তা বরাবরই হয়েছে মলিন-ধূসর।
১৯৫২ সালে পরাধীনতার শৃঙ্খলে থাকা জাতি শুধুমাত্র ভাষার অধিকার রক্ষায় গর্জে ওঠে। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে নিরস্ত্র বাঙালি পথে নামে। সম্বল বলতে দৃপ্ত স্লোগান আর ব্যানার-প্লাকার্ডে প্রতিবাদী ভাষা। রাষ্ট্র ভাষা, রাষ্ট্র ভাষা, বাংলা চাই, বাংলা চাই-তখনও সরব।
বাঙালির আত্মজাগরণ কিংবা শোষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সব জায়গায়ই প্রতিবাদী হয়েছে ভাষা। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনেও সেদিনের পোস্টার আর স্লোগানগুলোই হয়েছে প্রেরণার উৎস। এমনকি ১৯৭১ সালে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনের মুহূর্তেও প্রতিবাদের উপকরণ হয়েছে ভাষা। লাল-সবুজের জমিনটাকে নিজের করে নিতে মহান মুক্তিযুদ্ধে বুলেটের জবাব বুলেট দিয়েই দিয়েছে বাংলার মানুষ। তবে তার আগে অকুতোভয় বাঙালি স্লোগান আর প্ল্যাকার্ড হাতে অবলীলায় দাঁড়িয়েছে বন্দুকের সামনে। সেখানেও পরাজিত বুলেট, জয়ী বাঙালির বুক পকেটের সাহস- যার উপকরণ ভাষা- তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা, তুমি কে? আমি কে? বাঙালি, বাঙালি কিংবা বীর বাঙালি অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর’- স্লোগান।
১৯৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সাহসী নূর হোসেনের কথা নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে। বুকে-পিঠে দৃপ্ত স্লোগানে অকুতোভয় নূর হোসেন তার প্রতিবাদ জানিয়েছিলো ভাষার মাধ্যমেই। বুলেট হয়ত বিদ্ধ করেছে নূর হোসেনকে, কিন্তু তাতে কী, জয়ী তো হতে পারেনি। জয় হয়েছে ভাষারই –প্রতিবাদী ভাষার।
সবশেষ ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাইয়ের উপাখ্যান সবারই জানা। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালান শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ টু পয়েন্ট ও তৈরি হয়। এখানেও বুলেটের সামনে বুক পেতে দ্বিধা করেনি ছাত্র-জনতা। তবে সব কিছুকেই ছাপিয়ে যায় প্রতিবাদের ধরন। স্লোগান-প্ল্যাকার্ডের ইতিহাসের সাথে এবার যুক্ত হয়েছে গ্রাফিতি। এখানেও বিজয় ভাষার। পরাজিত হয়েছে বুলেট।