জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ৫০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংস্থার ওই রিপোর্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জুলাই-আগস্টের গণহত্যার সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও বিগত ১৫ বছরে ঘটা গুম-খুনের নির্দেশদাতাও ছিলেন তিনি।
শুধু জুলাই আগস্টের গণহত্যার চিত্র নয়, প্রতিবেদনে উঠে এসেছে গত ১৫ বছরের গুম খুনের চিত্রও। বলা হয়েছে, গত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনার নিষ্পেষণমূলক হাতিয়ারের মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা পর্যায়ক্রমে বিরোধীদলীয় সদস্য, সমালোচক, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের টার্গেট করেছে। এক্ষেত্রে বানোয়াট মামলা দেয়া, নির্যাতন করা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, খেয়ালখুশিমতো গ্রেফতার এবং জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জুলাই আগস্টের আন্দোলন দমাতে নির্বিচারে গুলি চালানোর নির্দেশ এসেছিলো সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে। তদন্তকালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিনিধিরা কিছু পুলিশ সদস্যের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে জুলাই আগস্টের বর্বরতার ভয়ানক চিত্র।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিএমপির সদর দফতরে সিসিটিভি দেখে শীর্ষ কর্মকর্তারা এমনভাবে গুলি করার নির্দেশ দিচ্ছিলেন যা দেখে মনে হচ্ছিল তারা ভিডিও গেম খেলছেন। পায়ে নয় আন্দোলনকারীদের গুলি করা হয়েছে বুকের ওপর। ব্যবহার হয়েছে সীসার বুলেট। আশপাশের বাসাবাড়ির জানালা বা গেটে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের ওপরও গুলি চালানো হয়েছে, যাতে কেউ নৃশংসতার সাক্ষী হতে না পারে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিনিধিকে একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাহিনীকে রাজনীতিকরণ করার মধ্য দিয়ে জনগণের সামনে পুলিশের ইমেজকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদনে ৫ আগস্টের পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বলা হয়েছে, পুলিশ আবারও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোন বাছ-বিচার ছাড়াই ফৌজদারী মামলা দায়ের করছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, স্বেচ্ছাচারী এমন গ্রেফতার এবং প্রতিশোধমূলক সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। নইলে সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ব্যাহত হতে পারে। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারের পাশাপাশি র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশও করেছে সংস্থাটি।