বিজয় দিবসকে ‘ভারতের ঐতিহাসিক জয়’ দাবি মোদির

প্রতিবছর বিজয় দিবস এলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী, ক্যাবিনেট মন্ত্রী ও বিরোধী রাজনীতিকদের অনেকেই ‘বিজয় দিবস’কে স্মরণ করেন। দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও এদিন এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট (টুইট) করেন। তবে ‘বিজয় দিবস’ উপলক্ষে করা সেসব ভার্চুয়াল বার্তায় কোথাও দেখা যায় না বাংলাদেশের নাম। এমনকি মুক্তিবাহিনী, এদেশের মানুষের নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের গল্পও থাকে উপেক্ষিত।

প্রতি বছরের মতো এবারও টুইট করেছেন নরেন্দ্র মোদি। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ২৭ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করেন তিনি। মোদি লেখেন, আজ বিজয় দিবসে আমরা ১৯৭১ সালে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়ে অবদান রাখা সাহসী সৈন্যদের সাহস ও আত্মত্যাগকে সম্মান জানাই। তাদের নিঃস্বার্থ উৎসর্গ ও অটল সংকল্প আমাদের জাতিকে রক্ষা করেছে এবং আমাদের গৌরব এনে দিয়েছে। এই দিনটি তাদের অসাধারণ বীরত্ব এবং তাদের অদম্য চেতনার প্রতি রইলো শ্রদ্ধাঞ্জলি। তাদের আত্মত্যাগ চিরকাল প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে ও আমাদের জাতির ইতিহাসে গভীরভাবে গেঁথে থাকবে।

মোদির টুইটের সার্বিক অংশ এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেখানে মুক্তিযুদ্ধকে ‘ভারতীয় সেনাবাহিনীর অসাধারণ সাফল্য’ বলেই মনে হবে। পুরো পোস্টে ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি পর্যন্ত অনুপস্থিত। এমনকি এই ‘বিজয় দিবস’ যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত তা বোঝার কোনো উপায় নেই।

মোদির এমন টুইটের পাশাপাশি দেশটির বেশ কিছু রাজনীতিবিদ ও তারকাদেরও দেখা যায় প্রতি বছর একই সুরে কথা বলতে। যেমন, এই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে গুজরাট রাজ্য বিধানসভার এমএলএ পূর্নিশকে লেখতে দেখা যায়, বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা। আমাদের সৈন্যদের বীরত্বগাঁথার প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা।

মোদির এ টুইট ঘিরে বেশ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে নেটিজেনরা। অনেকেই তার পোস্টের স্ক্রিনশট নিয়ে অন্য সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নিজেদের মন্তব্য জানিয়েছে। সেখানে জাতির একটি শ্রেষ্ঠ অর্জনের গৌরব রীতিমতো ভারতীয়রা ছিনতাই করে নেয়ার চেষ্টা করছে- বলেও সমালোচনা করেছেন অনেকে। আবার সম্মানসূচক পররাষ্ট্রনীতির আচরণ যে এটি নয়, এমন বিষয়ের প্রতিও ইঙ্গিত করেছেন নেটজেনরা। মোদির মনোভাব বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবেও বর্ণনা করেছেন কেউ কেউ।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ইতি ঘটে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)। সেবছরের ১৬ই ডিসেম্বর এক পড়ন্ত বিকেলে বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বোভৌম একটি দেশের। যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর পাশাপাশি ভারতীয় সেনাদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছিল। তবে, যেখানে মুক্তিযুদ্ধ-বাংলাদেশ শব্দগুলো অনুপস্থিত, সেখানে কোন ‘বিজয় দিবস’ পালন করে ভারতীয়তা, সেটিই এখন মুখ্য প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *