২৮ ছাত্র সংগঠনের সভা; স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রত্যয়

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ২৮টি ছাত্র সংগঠনের নেতারা মতবিনিময় সভা করেছেন। সভায় দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর কাটাবনে এই মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এই সভায় ছিল না ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সভায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব, অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক পরিবেশ, ছাত্র সংসদ নির্বাচন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ভূমিকাসহ সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

মতবিনিময় সভায় ছাত্রনেতারা বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘ ১৫ বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। গণঅভ্যুত্থানে দুই হাজারের অধিক মানুষ শহীদ ও ৩০ হাজারের অধিক মানুষ আহত হয়েছে। ভারত রাজনৈতিকভাবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে এখন নানা ধরনের উসকানি দেয়ার চেষ্টা করছে। আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা তারই প্রকাশ।

ছাত্রনেতারা আরও বলেন, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী, দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত ব্যর্থ হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করছি, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত এদেশের ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে হলেও মোকাবেলা করবে।

মতবিনিময় সভায় ছাত্র নেতৃবৃন্দ জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যার বিচার, আহতদের সুচিকিৎসা, নিহতদের পরিবারের পুনর্বাসন নিশ্চিত করার দাবি জানান। বলেন, দেশে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক যেকোন পদক্ষেপ ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করা হবে। একইসঙ্গে দখলদারিত্বমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, শিক্ষার্থীদের গণতন্ত্র ও সংগঠনের অধিকার চর্চার পরিবেশ নিশ্চিত করতে ও ছাত্র রাজনীতি বন্ধের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গণতান্ত্রিক সংস্কারের লক্ষ্যে সংস্কার কমিশন গঠন এবং সংস্কার শেষে দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানান।

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সমালোচনা করে মতবিনিময় সভায় অংশ নেয়া নেতৃবৃন্দ বলেন, অভ্যুত্থানের পর থেকেই সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র সংগঠনগুলোকে অপরায়নের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অভ্যুত্থানে হাজারও জনতার রক্তের ওপরে যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল, গোষ্ঠীগত স্বার্থ উদ্ধারে ব্যবহারের কারণে তা ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আমরা মনে করি, এই জাতীয় ঐক্যে যদি ভাঙনের সৃষ্টি হয় তার দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বরা কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারবে না।

মতবিনিময় সভায় অংশ নেয়া ছাত্রসংগঠনগুলো হলো- ছাত্রদল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জেএসডি), জাতীয় ছাত্র সমাজ (জাফর), জাগপা ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ ছাত্র মিশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বিপ্লবী, ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ভাষানী ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল), নাগরিক ছাত্র ঐক্য, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় ছাত্র সমাজ (পার্থ), ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস, বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষ, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম ছাত্রলীগ (নুর আলম), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র সমাজ ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন।

প্রসঙ্গত, বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সভা ডেকেছিল। যেই সভা বেশিরভাগ ছাত্র সংগঠনই বয়কট করেছিল। এবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বাদ দিয়েই ২৮টি দল জাতীয় ঐক্য গঠনে মতবিনিময় সভা করলো।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *