প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাচ্ছে ৩৩ হাজার গৃহহীন পরিবার। ফলে ঈদের আগে এসব পরিবারের দেড় লাখ মানুষ পাচ্ছে স্থায়ী ঠিকানা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার এই ভূমিহীনদের মাঝে জমির দলিলসহ এসব ঘর হস্তান্তর করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নিয়ে মহাযজ্ঞ চলছে সারা দেশে। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় ধাপে এবার ৬৫ হাজার ৪৭৪টি পরিবার ঘর পাবে। তার মধ্যে ৩২ হাজার ৯০৪টি ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এই ঘরগুলো গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মাঝে হস্তান্তর করা হলে ঈদ আনন্দে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া গত রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েদেশের চারটি উপজেলায় গৃহহীন মানুষের হাতে উপহারের এসব ঘর হস্তান্তর করবেন। ফলে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ ঈদের আগে উপহারের ঘরে উঠবে। ঈদ উপলক্ষে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের পোড়াদিয়া বালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, বরগুনা সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের খাজুরতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের খোকশাবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারার বারখাইন ইউনিয়নের হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব ঘর হস্তান্তর করা হবে।”
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের তুলনায় তৃতীয় ধাপে ঘরের কাঠামোতে বেশ পরিবর্তন এসেছে। বাড়ানো হয়েছে ব্যয়। ফলে ঘরগুলো মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী হবে।
জানা গেছে, ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি প্রকল্প গ্রহণ করে, যা প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের এরই মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে এক লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি ঘর দেওয়া হয়েছে। দুই শতাংশ জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা ঘর করে দেওয়া হয়েছে তাদের। এর সঙ্গে রান্নাঘর ও টয়লেট ছিল। আঙিনায় হাঁস-মুরগি পালন ও শাক-সবজি চাষেরও জায়গা ছিল।
প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ঘরে কিছু ত্রুটি পায় সরকার। সেসব ত্রুটি চিহ্নিত করে তৃতীয় ধাপের ঘরগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় থেকে তৃতীয় ধাপের ঘরগুলোর নকশা ও পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে ঘরগুলো অধিক টেকসই ও দুর্যোগ সহনীয় হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তৃতীয় ধাপের প্রতিটি ঘরের নির্মাণ খরচ ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রতিটি ঘরের জন্য প্রথম পর্যায়ে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, গৃহহীন মানুষের জন্য নির্মিত তৃতীয় ধাপের ঘরগুলো আরও মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী হবে। ইটের ভিত ও কলামের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে আরসিসি ঢালাইয়ের গ্রেট বিম ও কলাম। ঘরের চালা মজবুত করতেও কাঠামো নির্মাণে পরিবর্তন আনা হয়েছে। রঙিন টিনশেডের প্রতিটি একক ঘরে ইটের দেয়াল, কংক্রিটের মেঝে এবং টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি দুটি করে শোবার ঘর, একটি রান্নাঘর, টয়লেট এবং সামনে খোলা বারান্দা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, “আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি নির্বাচনের ক্ষেত্রে এবার অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ঘর তৈরির আগে মাটি পরীক্ষা করেছে এলজিইডির ইঞ্জিনিয়াররা। জমি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, “১ লাখ ১৮ হাজার ঘরের মধ্যে আমরা ৪০টি ঘরে ত্রুটি পেয়েছি। যেটাকে অনিয়ম বলা হচ্ছে, সেটি ত্রুটি। কোনও কোনও জায়গায় আমাদের ভূমি ক্ষয় হয়েছে, কোথাও নির্মাণকালে জোয়ারের পানি ঢুকে গেছে। সেই জায়গায় কিন্তু আমরা তাৎক্ষণিক বিকল্প জায়গায় শক্ত প্রতিরক্ষা দিয়ে দিয়েছি।”
‘মুজিববর্ষে কেউ গৃহ ও ভূমিহীন থাকবে না’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ঘোষণা বাস্তবায়নে প্রায় ৯ লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে দেশের ভূমি ও গৃহহীন ৬৬ হাজার ১৮৯টি পরিবারের হাতে দুই শতাংশ জমি ও ঘর তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। ওই দিনই ৭৪৩টি ব্যারাকে আরও ৩ হাজার ৭১৫ পরিবারকে পুনর্বাসন কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করেন তিনি।
এরপর একই বছরের ২০ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৫৩ হাজার ৩৪০টি পরিবারকে জমি ও নতুন ঘর উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থাৎ আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রথম দুই ধাপে ১ লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি পরিবার ঘর পেয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় তৃতীয় ধাপে আরও ৬৫ হাজার ৪৭৪টি ঘর নির্মাণের কাজ চলছে।