বিদায়ী বছরে দেশে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসার ৫১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে এই শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে ৩০৭ জনই নারী শিক্ষার্থী। যা মোট আত্মহত্যাকারীর ৬০ দশমিক ২ শতাংশ। সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আচঁল ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে ২০২৩ সালের আত্মহত্যার এই চিত্র তুলে ধরেন সংগঠনটির রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের টিম লিডার ফারজানা আক্তার লাবনী।
তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গতবছর শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল অভিমান। নানা কারণে অভিমানে পুড়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ১৬৫ জন।
অপরদিকে, প্রেমঘটিত সমস্যার জেরে প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছেন ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ, মানসিক সমস্যায় ৯ দশমিক ৯ শতাংশ ও যৌন হয়রানি শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ২ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।
এছাড়া একাডেমিক চাপে মোট ২৩ জন আত্মহনন করেছেন। যাদের মধ্যে ১৩ জন নারী শিক্ষার্থী ও ১০ জন পুরুষ শিক্ষার্থী। আত্মহত্যাকারীর ৪৪ দশমিক ২ শতাংশই ছিল স্কুলগামী বলেও সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়।
এ সময় আত্মহত্যা কমাতে আচঁল ফাউন্ডেশন ১০টি প্রস্তাব তুলে ধরে। তাদের প্রস্তাবনাগুলো-
১. স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিমাসে অন্তত একবার মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা
২. প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে মেন্টর নির্ধারণ এবং উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি
৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্য কর্নার চালু করা
৪. শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা
৫. মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ট্যাবু ভাঙতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন প্রচার চালানো
৬. পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আবেগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল ও ধৈর্যশীলতা শেখানো
৭. যেকোনো নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে শিক্ষার্থীদের কৌশল, মানকি চাপ নিয়ন্ত্রণ ও মানসিক বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে শেখানো
৮. শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পরিবারের সদস্যদের আত্মহত্যার লক্ষণ সম্পর্কে ধারণা বাড়ানো
৯. মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা ইন্সুরেন্স বীমার আওতায় আনা; যেন তা সকলের জন্য সাশ্রয়ী হয়
১০. মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দ্রুত ও সহজলভ্য করতে টোল ফ্রি জাতীয় হটলাইন নম্বর চালু করা
প্রতিবেদনটির বিষয়ে মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিবেদনের তথ্য উপাত্তসমূহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা করেন হরমোনজনিত কারণে কিশোর-কিশোরীদের আবেগ নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা কমছে এবং আত্মহত্যার হার বাড়ছে। বিষয়টি আসলে এত সরল রৈখিক নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।