বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) হ্যাট্ট্রিক হারের পর অবশেষে আহমেদ শেহজাদ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ঝোড়ো ইনিংসে জয় পেয়েছে ফরচুন বরিশাল। সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৪৯ রানে হারিয়েছে তামিম ইকবালের দল। আগে ব্যাট করতে নেমে শেহজাদ ও রিয়াদের জোরা ফিফটিতে ১৮৬ রানের বড় সংগ্রহ পায় বরিশাল। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মোহাম্মাদ ইমরানের বোলিং তোপে ১৫ বল বাকি থাকতেই ১৩৭ রানে গুটিয়ে যায় সিলেট দল। চলতি আসরে হারের ফাই-ফার পূর্ণ করলো মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার দল।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি ফরচুন বরিশালের। স্কোরবোর্ডে ৩৩ রান তুলতেই দুই উইকেট হারায় তারা। ৮ বলে দুই রান করে নাঈম হাসানের বলে লেগ বিফোর উইকেটের শিকার হন তামিম ইকবাল। আর পাঁচ বলে এক রান করা প্রীতম কুমারকে ফেরান সিলেটের জিম্বাবুইয়ান রিক্রুট রিচার্ড এনগারাভা। আরেকপাশ দিয়ে অবশ্য রান তুলে যাচ্ছিলেন আহমেদ শেহজাদ।
পাকিস্তানের সাবেক এই ওপেনার হাফ সেঞ্চুরি তোলেন মাত্র ৩০ বলে। সৌম্য সরকারকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যান তিনি। অল্প সময়ের মাঝে দু’জন মিলে ৫০ রানের জুটি গড়েন। এই জুটি ভাঙেন বেনি হাওয়েল। তার নিচু হওয়া ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য সরকার। ১৭ বলে তিনটি চারে ২০ রান করে ফিরেন সৌম্য। দলীয় ১০৮ রানে ফিরে যান শেহজাদও।
৪১ বলে নয়টি চার ও একটি ছক্কায় ৬৬ রান করা এই ব্যাটারকে কট এন্ড বোল্ড করে ফেরান হাওয়েল। দলীয় ১৩৪ রানে মুশফিকুর রহিমের উইকেট হারায় বরিশাল। হাওয়েলকে মিড উইকেটে উড়িয়ে মারতে গিয়ে নাঈম হাসানের তালুবন্দি হন মুশফিক। প্রথম চেষ্টায় অবশ্য ওভার বাউন্ডারি বাঁচান নাঈম, পরে বাউন্ডারিতে ফিরে এসে ক্যাচ ধরেন তিনি।
শেষ দিকে মাহমুদউলাহর ঝড়ো ইনিংসে লড়াকু সংগ্রহ পায় বরিশাল। মাত্র ২৩ বলে এ দিন হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান এই ফিনিশার। শেষ পর্যন্ত ২৪ বলে সাতটি চার ও দুটি ছক্কায় ৫৪ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। সঙ্গী মিরাজ অপরাজিত ছিলেন ৬ বলে ১৫ রান করে।
১৮৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই বিদায় নেন সিলেটের দুই ওপেনার। ৭ বলে ৯ করে সাজঘরে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। মোহাম্মদ মিঠুনের জায়গায় সেরা একাদশে জায়গা পাওয়া শামসুর রহমান শুভ অবশ্য করেন ২৫ রান। চমক হিসাবেই এদিন চারে নামেন মাশরাফী। কিন্তু ক্লান্ত মাশরাফী ৩ বলের বেশি খেলতে পারেনি। ঘরের মাঠ সিলেটে এবারের বিপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা খালেদ প্রথম ওভারেই পান উইকেটের দেখা। তার হাতেই বিদায় ঘটে সিলেটের অধিনায়কের।
এরপর অবশ্য সিলেটের দর্শকদের আনন্দে মাতান জাকির হাসান ও বেনি হাওয়েল। ৪টি করে চার ও ছক্কায় তাদের জুটিতে আসে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৫৮ রান। এই জুটির তাণ্ডবে জয়ের আশাও দেখতে শুরু করেছিল সিলেট স্ট্রাইকার্স। কিন্তু ফের ছন্দপতন। জাকির হাসানের রান যখন ২৭ বলে ৩৭, খালেদের বলে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ তুলেন। মেহেদী হাসান মিরাজ দৌড়ে এসে বল তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হন। নতুন জীবন পাওয়া জাকির অবশ্য পরের ওভারেই হারান উইকেট। এবার লং অফে দাঁড়ানো মিরাজ আর আগের ভুল করেননি। ৪ রানের জন্য ফিফটি মিস করেন জাকির।
বাঁহাতি এই ব্যাটারের ফেরার পর যেন মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে সিলেটের মিডল অর্ডার। পরপর দুই ওভারে মিরাজ, খালেদ শিকার করেন আরও দুই উইকেট। ২৪ রানে থাকা হাওয়েল মিরাজের বলেই ক্যাচ দিয়ে ধরেন সাজঘরের পথ। খালেদ আহমেদ আরিফুলকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে দখলে নেন নিজের দ্বিতীয় শিকার।
১ রানে বিদায় নেন রায়ান বার্লও। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউটে কাটা পড়েন ১ রান করা নাইম হাসান। পরপর দুই বলে সিলেটের শেষ দুই উইকেট নেন মোহাম্মদ ইমরান। ১৭.৩ ওভারেই ১৩৭ রানে গুটিয়ে গেল সিলেট স্ট্রাইকার্স। ৪৯ রানের রোমাঞ্চকর জয়ে সিলেট রাঙাল বরিশাল। ফিরল জয়ের ধারায়। বরিশালের হয়ে ৪টি উইকেট পান পেসার ইমরান।