জরুরি প্রয়োজন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া। তাই বলে রাজধানীর সরকারি হাসপাতালে চাইলেই কি ভর্তি হওয়া যায়? আর যদি অপারেশনের দরকার হয়, তাহলে তো জটিলতা আরও বেশি। সিরিয়ালের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হয় আক্রান্তদের। কোনো কারণে আইসিইউ প্রয়োজন হলে তো সংকট তখন পর্বতসমান। উপায়-অন্তর না পেয়ে বেসরকারি হাসপাতালে গেলে তালগোল পাকিয়ে যায় বছরের আয়-ব্যয়ের হিসেব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবার পরিবেশ তৈরি না হওয়ার বড় কারণ- দুর্নীতি।
রাজধানীতে কথা হয় পঞ্চগড়ের নুর আলমের সাথে। রিকশা চালিয়ে কোনোমতে নিজের ও পরিবারের পেট চালান এই বৃদ্ধ। তার আয়ে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাম চোখের অসুখ। অনবরত পানি ঝড়ছে চোখ থেকে। আয়ের পথের বাধা দূর করতে এসেছেন রাজধানীর চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। চিকিৎসক জানিয়েছেন তার অপারেশন লাগবে। তবে ভর্তির সিরিয়াল মিলেছে ছয় মাস পর।
নুর আলম বলেন, এক হাজার ৭০ টাকা দিয়ে পরীক্ষা করিয়েছি। চিকিৎসক বলেছে, ওষুধে কাজ হবে না। অপারেশন করতে হবে। আগস্টে সিরিয়াল পেয়েছি।
প্রায় একই চিত্র রাজধানীর অন্য হাসপাতালগুলোর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, নিউওরোসায়েন্সসহ বেশিরভাগ হাসপাতালে সাধারণভাবে রোগী ভর্তি বেশ দুরহ। তবে ক্ষমতা বা প্রভাব থাকলে বিষয়টি ভিন্ন।
এ বিষয়ে এক রোগীর স্বজন বলেন, আমাদের তো আর ওরকম সামর্থ্য নেই। সরকারি হাসপাতালে অপারেশন করাতে চেয়েছিলাম। এখনও সিরিয়াল পাইনি। বাড়ি গিয়ে পরিবারের সাথে কথা বলে দেখা যাক কী করা যায়।
সাধারণ চিকিৎসার চেয়েও বেহাল দশা আইসিইউতে। সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ যেন অনেকটা সোনার হরিণের মতো। শরীর যুক্তি না মানলেও সিরিয়াল দিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হয় দিনের পর দিন।
এ বিষয়ে আরেক রোগীর স্বজন বলেন, চিকিৎসক বলে দিয়েছে, রেফারও করেছে। আমরা ছয়-সাতদিন ধরে আইসিইউয়ের জন্য অপেক্ষা করছি। তবে এখনও পাচ্ছি না। হাসপাতালের পরিচালক স্বাক্ষর করে দিয়েছে, তারপরও পাইনি।
বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, দশ হাজার মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালে শয্যা আছে ৩টি। অথচ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বিবেচনায় থাকার কথা ৩৫ টি। আছে জনবলের ঘাটতি। ফলে বাঁচতে হলে ছুটতে হয় বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে আবার টাকার অঙ্ক অনেক বড়।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০টি অপারেশন করি। তবে দেখা যায়, প্রতিদিন দেড়শর বেশি রোগী আসে। তাহলে কী করার আছে? তখন যারা একেবারেই কম দেখছেন, জরুরি অপারেশন দরকার তাদেরকেই আগে সুযোগ দেয়া হয়।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণই মূল সমস্যা নয়। এর বাইরেও নানা কারণ রয়েছে।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, এইখাতে যতটুকু ব্যয় করার প্রয়োজন ততটুকু রাষ্ট্র ব্যয় করতে পারে না। এই ব্যয় করতে না পারার পেছনে সিস্টেমেটিক নানা ত্রুটি রয়েছে। এই ত্রুটি রেখে ভালো চিকিৎসাব্যবস্থা আশা করা যায় না। তাই এসব দূর করার পাশাপাশি হাসপাতালের সুবিধা বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।