স্টাফ রিপোর্টারঃ পাঁচবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে রেকর্ড গড়লেন শেখ হাসিনা ষ রাতেই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দফতর বণ্টন করা হয়েছে ষ মন্ত্রিসভায় ৩ জন সংখ্যালঘু ও একজন নৃ-জনগোষ্ঠীর সদস্য রয়েছেন
টানা চতুর্থবার এবং পাঁচবারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকারের পথচলা শরু হয়ে গেল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ফের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন শেখ হাসিনা। অতঃপর একে একে ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী শপথ গ্রহণ করেন। শপথ গ্রহণের পর মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করা হয়। নতুন মন্ত্রিসভায় ২ জন টেকনোক্র্যাট এবং প্রধানমন্ত্রীসহ চারজন নারী সদস্য জায়গা পেয়েছেন। এ ছাড়াও মন্ত্রিসভায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৩ জন এবং নৃ-জনগোষ্ঠীর একজন জায়গা পেয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের শপথবাক্য পাঠ করান প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন নতুন মন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রায় এক হাজারেরও বেশি অতিথিসহ বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিদেশ কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো শপথ নেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করল ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। তার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত নতুন মন্ত্রিসভার ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রীকে নিয়োগ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (২) দফা অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট গতকাল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের নিয়োগ দিয়েছেন। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হয়। এর পর রাতেই মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন করা হয়।
এই শপথ অনুষ্ঠানে তিন বাহিনীর প্রধান, সচিব, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিদেশি রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও মিশনপ্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, বুদ্ধিজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুর রহমান সচিবালয়ে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের তালিকা প্রকাশ করেন। এই তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেক মন্ত্রীর বাড়িতে পরিবহন পুল থেকে গাড়ি যায়। ওই গাড়িতে চড়ে মন্ত্রীরা বঙ্গভবনে হাজির হন শপথ নিতে। নতুন মন্ত্রিসভায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রী নিজের কাছে রেখেছেন। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা শপথ নিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া বিদায়ী মন্ত্রিসভার কয়েকজনকে আগের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেই রাখা হয়েছে। আবার আগের মন্ত্রিসভার কয়েকজনকে নতুন মন্ত্রিসভায় রাখা হলেও মন্ত্রণালয় পরিবর্তন করা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে স্থান পাওয়া মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন সেগুলো হচ্ছেÑ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়, সাংস্কৃতিকবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে দপ্তর পেলেন আ ক ম মোজাম্মেল হক, (মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়), ওবায়দুল কাদের (সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়), আবুল হাসান মাহমুদ আলী (অর্থ মন্ত্রণালয়), আনিসুল হক (আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়), নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন (শিল্প মন্ত্রণালয়), আসাদুজ্জামান খান (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়), মো. তাজুল ইসলাম (স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়), মুহাম্মদ ফারুক খান (বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়), ড. মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়), ডা. দীপু মনি (সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়), সাধন চন্দ্র মজুমদার (খাদ্য মন্ত্রণালয়), মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম (পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়), মো. ফরিদুল হক খান (ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়), র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী (গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়), নারায়ণ চন্দ্র চন্দ (ভূমি মন্ত্রণালয়), জাহাঙ্গীর কবির নানক (পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়), মো. আবদুর রহমান (মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়) মো. আব্দুস শহীদ (কৃষি মন্ত্রণালয়), স্থপতি ইয়াফেস ওসমান (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়), ডা. সামন্ত লাল সেন (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়) মো. জিল্লুল হাকিম (রেল মন্ত্রণালয়), মো. ফরহাদ হোসেন (জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়), নাজমুল হাসান পাপন (যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়), সাবের হোসেন চৌধুরী (পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্ত মন্ত্রণালয়), মহিবুল হাসান চৌধুরী (শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের) দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপান জারি করা হয়।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নসরুল হামিদ (বিদ্যুৎ বিভাগ), খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়), জুনাইদ আহমেদ পলক (ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়), জাহিদ ফারুক (পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়), সিমিন হোসেন রিমি (মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়), কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়), মহিবুর রহমান (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়), মোহাম্মদ আলী আরাফাত (তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়), শফিকুর রহমান চৌধুরী (প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়), রুমানা আলী প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়) আহসানুল ইসলাম টিটু (বাণিজ্য মন্ত্রণালয়) দায়িত্ব পেয়েছেন।
গত বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে বেলা দেড়টার দিকে নতুন মন্ত্রিসভার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের তালিকা নিয়ে সচিবালয়ে ফেরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ সংসদীয় আসনে ভোট গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ২৯৮টির বেসরকারি ফলাফলে আওয়ামী লীগ ২২২টি, জাতীয় পার্টি ১১টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টি আসনে বিজয়ী হন।
বঙ্গভবনে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের খাবারের তালিকা ছিল গোশত ও সবজি জাতীয় খাবার। পাশাপাশি বিভিন্ন ফল ছাড়াও খাবার হিসেবে দেওয়া হয় মাটন শিক কাবাব, চিকেন শাশলিক, ভেটকি মাছের ফিশ ফিঙ্গার। এ ছাড়া বয়েল্ড ভেজিটেবলসের সঙ্গে দেওয়া হয় মাশরুম, পনির সমুচা ও স্পাই। পরিবেশন করা হয় পাটিসাপটা পিঠার পাশাপাশি মিষ্টি-বাকলাভা। এ তালিকা ছাড়াও কমলা, আপেল, আঙুর দিয়ে সাজানো ফলের ঝুড়িও আপ্যায়নে ছিল। বঙ্গভবনের সবুজ লনে সাজানো শামিয়ানার নিচে চা আর কফিতে শেষ সময়ের আড্ডা।