আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ভোটের মাত্র এক সপ্তাহ আগে সাইফার মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয় দেশটির আদালত। মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারের বিশেষ আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
সাইফার মামলা বলতে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি বা বার্তা ফাঁসের মামলাকে বোঝায়। গত বছর থেকেই তাদের বিরুদ্ধে এ সাইফার মামলার শুনানি চলছিল। দেশটির ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইনে এ মামলাটি দায়ের করে।
মামলায় অভিযোগ আনা হয়, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের প্রমাণ হিসেবে একটি তারবার্তা ফাঁস করতে চেয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা বলছে, ওই তারবার্তার মাধ্যমে ইমরান প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন, পাকিস্তানের ক্ষমতাধর সেনাবাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছে।
সাইফার মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ১০ বছরের কারাদণ্ডের রায়ে ক্ষুদ্ধ তার সমর্থকরা। তাদের অভিযোগ, নির্বাচনের মাত্র ৮ দিন আগে আদালতের এই রায় তার প্রতি মারাত্মক অবিচার। একইসঙ্গে রায় প্রত্যাখ্যান করে ইমরানের সমর্থকরা বলছেন, জনপ্রিয় নেতাকে আরও কোনঠাসা করতেই আদালতের এমন রায়।
এদিকে রাজনৈতিক অনেক বিশ্লেষকদের মতে ইমরান খানের দল পিটিআই তো ব্যালটে নেই-ই, তার দলের যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাদের চাপে ফেলতেই এমন রায় দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সমর্থকদের কাছেও পৌঁছানো হলো কঠোর বার্তা যে- খুব সহজে ছাড়া পাবেন না ইমরান খান।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভাগ্যের চাকা যেন ঘুরছে বিপরীত দিকে। মামলা, জেল, সাজা পিছুই ছাড়ছেই না এই সাবেক ক্রিকেটারের। এবার আলোচিত সাইফার মামলায় তাকে নতুন করে আরও ১০ বছরের কারাদণ্ড দিলেন দেশটির আদালত।
ক্ষুব্ধ এক সমর্থক বলেন, আদালতের এই রায় কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। পুরো বিশ্ব জানে ইমরান খান কতটা সৎ। তার সাথে যা হচ্ছে তা অন্যায়।
অন্য এক সমর্থক বলেন, ইমরান খান একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। তার বিরুদ্ধে যে রায় দেয়া হয়েছে তা সঠিক নয়। পাকিস্তানের মানুষ তার হাতে দেশের দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে।
আরেকজন সমর্থক বলেন, আমরা সবাই জানি কে সৎ। আর কে জনগণের টাকা মেরে খায়। ইমরান খান আমাদের শেষ সহায়। অথচ সবাই মিলে তাকে দমিয়ে রাখতে চাইছে।
অন্যদিকে আদালতের এই রায়কে দেশের আইন ও বিচারের প্রতি প্রহসন আখ্যা দিয়েছেন ইমরান খানের আইনজীবী শোয়েব শাহীন। তিনি বলেন, ইমরান খানের লিগাল টিমকে কোর্টে রাখাই হয়নি। তারা কোনোকিছু যাচাই-বাছাই বা প্রতিবাদ করার সুযোগ পায়নি। এটি একেবারেই সংবিধান বহির্ভূত। এই রায় প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে ইমরান খানের দল-পিটিআইকে শুরু থেকেই নানাভাবে চাপে রাখার চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীনরা। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা থেকে শুরু করে ধরপাকড়। এছাড়াও প্রতীক বরাদ্দ না দেয়াসহ সব চেষ্টাই করেছে জোট সরকার। তারপরও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন দলটির অনেক নেতা। তাই এ রায় তাদেরও চাপে ফেলবে। হতাশা বাড়বে নেতাকর্মীদের, হাল ছেড়ে দিতে পারে অনেকে। ফলে, ভোট কেন্দ্রে কমে যেতে পারে ইমরানের সমর্থকদের উপস্থিতি ।
দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে এরইমধ্যে তিন বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন ইমরান খান। এবার ‘অফিসিয়াল গোপনীয়তা রক্ষা আইনের অধীনে’ কারাদণ্ড দেয়া হলো তাকে।