দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র কারবারিরা। দেশের অন্তত ১৩ জেলার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে নানা কৌশলে ঢুকছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। এসব অস্ত্রের চোরাচালান ঠেকাতে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনায় সারা দেশে চলছে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান। এরপরও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না অবৈধ অস্ত্র চোরাচালানিদের।
বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সূত্রে জানা যায়, অস্ত্র চোরাচালানের প্রধান রুট সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। এসব জেলার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন পয়েন্টে অস্ত্র ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী দেশের চোরাচালানিদের সঙ্গে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় অস্ত্রের বাহক থাকে। তারা ওপার থেকে অস্ত্রগুলো চোরাইপথে এনে এদেশে অস্ত্র কারবারিদের হাতে তুলে দেন। এরপর কারবারিরা এসব অস্ত্র চিহ্নিত সন্ত্রাসী, অসাধু রাজনৈতিক নেতা, ডাকাত, ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন অপরাধীর কাছে বিক্রি করেন। দু-একটি অস্ত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে জব্দ হলেও অধিকাংশই চলে যায় ব্যবসায়ীদের হাতে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, ৯ ডিসেম্বর থেকে সারা দেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারকে (এসপি) এ সংক্রান্ত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই চিঠি সারা দেশের ওসিরাও পেয়েছেন।
পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা আমরা সব সময়ই করে থাকি। এখনো নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী আমাদের অভিযান চলছে।
সম্প্রতি বিজিবির ১০০তম ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে এ বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান বলেন, আমি মনে করি, নির্বাচনের সময় সীমান্ত আরও বেশি সেনসেটিভ হয়ে যায়। সেজন্য আমরা সীমান্তে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছি। অবৈধ অস্ত্রের চোরাচালান ঠেকাতে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছে বিজিবি।
ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনে যাতে কেউ ভোটার, প্রার্থী বা নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত তাদের চাপ সৃষ্টি করতে না পারে, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন করার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে, এজন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৫০ থানা এলাকায় অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। পুলিশ প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে। তথ্য সংগ্রহ করছে। সেই অনুযায়ী অভিযান অব্যাহত রেখেছে যাতে অবৈধ অস্ত্রের আমদানি হতে না পারে বা কেউ অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার করতে না পারে।
১২ ডিসেম্বর টেকনাফে অভিযান চালিয়ে বিজিবি ১টি পিস্তল, ১টি বন্দুক, ১টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ৩৭ রাউন্ড গুলি ও ২ কেজির বেশি ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ দুজনকে আটক করেছে। এর আগে ৮ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের তেলকুপি ঘাট এলাকা থেক একটি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিনসহ অস্ত্র চোরাকারবারি জামরুল ইসলাম ও মাজিউদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়া ১৪ নভেম্বর তেলকুপি এলাকা থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন, ৩৬ রাউন্ড গুলিসহ মাহবুব আলী নামে আরেক অস্ত্র চোরাকারবারিকে গ্রেফতার করা হয়। বিজিবি ৫৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, অস্ত্র, গোলাবারুদ, মাদক ও চোরাচালানের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে সীমান্ত এলাকায় অপারেশনাল কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বরে সীমান্ত এলাকাগুলো থেকে ৩৮টি পিস্তল, ১টি রিভলভার, ৪৯টি বিভিন্ন প্রকারের বন্দুক, ৪২টি ম্যাগাজিন, ৭৬১টি গোলাবারুদ, ৬টি মর্টার শেল এবং ২১২ কেজি গান পাউডার জব্দ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ১৭টি মামলায় আসামি করা হয়েছে ২০ জনকে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের ১১ মাসে চার হাজারের বেশি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ৮১৫টি।
র্যাব সূত্র বলছে, জানুয়ারি থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫৮১টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ২৬৬ জনকে।