সাধারণত কোনো জাহাজে একসঙ্গে সবার ঘুমাতে যাওয়ার কথা নয়। তবে এমভি আল বাখেরা লাইটার জাহাজে খুন হওয়া ৭ জনই ছিলো গভীর ঘুমে অচেতন। সুরতহাল দেখে পুলিশের ধারণা, চেতনানাশক দিয়ে নিস্তেজ করা হয়েছিলো সবাইকে। এরপর করা হয়েছে হত্যা।
একটি-দু’টি নয়, সাত-সাতটি মানুষকে পৈচাশিক কায়দায় গলা কেটে হত্যা। চাঁদপুরের হাইমচরের মাঝেরচর এলাকায় এমভি আল বাখেরার এই ঘটনায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন কেবল একজন। যদিও শ্বাসনালীতে আঘাত লাগায় তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড? ডাকাতি না পূর্বশত্রুতা? মূলত এই দুইটি কারণই আলোচনায় আসছে ঘুরেফিরে। তবে, ন্যাক্কারজনক এই ঘটনা যে পরিকল্পিত, এই ব্যপারে একমত প্রায় সবাই।
জাহাজে যার যার রুমে ঘুমিয়ে ছিলেন নিহত সবাই। মস্তক ছাড়া আর কোথাও আঘাতের কোনো চিহ্নও মেলেনি। ডাকাতির সঙ্গে এ ঘটনা মিলানো যায় না বলে মনে করেন নৌ পুলিশের এই কর্মকর্তা।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেছেন, প্রত্যেককেই চেতনানাশক প্রয়োগ করে কিংবা খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ প্রয়োগ করে এই ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। কারণ- একজনকে হত্যা করা হলে পাশের রুম থেকে কেউ টের পাবে না, এরকমটি হবার কথা হয়। ঘটনাস্থলে দেখা যায় প্রত্যেকেই শুয়ে আছেন এবং তাদের মাথায় ধারালো অস্ত্র দ্বারা আঘাত করা হয়েছে। তবে, শরীরের অন্য কোথাও আর কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
যদিও ডিসি বলছেন, নৌপথের এই রুটে প্রায়ই ঘটে ডাকাতি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। কয়েকদিন আগেও মাঝেরচর থেকে মিলেছিলো এমন খবর। এবারও তাই হতে পারে এমনটি; ধারণা জেলা প্রশাসকের।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেছেন, মোটিভ দেখে মনে হয়েছে যে নদীপথে প্রায়ই ডাকাতি হয়। আর যেহেতু জাহাজটিতে মূল্যবান জিনিস ছিলো, সুতরাং চুরি কিংবা ডাকাতি হতে পারে বলে মনে হচ্ছে।
ডিসি-এসপি’র ধারণা ভিন্ন হলেও একটা জায়গায় তারা একমত। তদন্তে হত্যার কারণ ও অপরাধী বেরিয়ে আসবে বলে আশা তাদের।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন আরও বলেন, এই ঘটনাটি চুরি কিংবা ডাকাতির মোটিভে করা হয়েছে এবং আমরা সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি। যদি তদন্তে ভিন্ন কিছু আছে, তাহলে তা জানানো হবে। এই ঘটনার পর নিরাপত্তাবেষ্টনী আরও জোরদার করা হবে।
অন্যদিকে, নৌ অঞ্চল-চাঁদপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান আরও বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ঘটনাটি নদীতে ঘটেছে। তবে, নৌ-পথকে কোনভাবেই অনিরাপদ বলা যাবে না। আমার বিশ্বাস, হত্যাকারী জাহাজের নাবিকদের সাথে একত্রে এই কাজ করেছে।
নির্মম-বর্বর এমন ঘটনা একজীবনে দেখেনি-শোনেনি চাঁদপুরের কেউ। সবাই জানলো প্রথমবার। আর তাতেই, নৌপথে চলাচল করা মানুষের মাঝে আতঙ্ক বেড়েছে বেশ।