পটুয়াখালী পৌরসভা নির্বাচনের হলফনামায় তথ্য গোপন করার অভিযোগ উঠেছে মেয়রপ্রার্থী আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে। হলফনামায় তিনি পদ্মা ব্যাংকে ঋণের পরিমাণ সাড়ে ৯ কোটি টাকা উল্লেখ করেছেন। তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, তার খেলাপি ঋণের পরিমাণ সাড়ে ২৪ কোটি টাকা।
মোটা অঙ্কের খেলাপি ঋণের কথা উল্লেখ করে পৌরসভা নির্বাচনে তার প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। তবে অজ্ঞাত কারণে আবুল কালাম আজাদের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা খান আবি শাহানুর খান। অভিযোগ উঠেছে— বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ব্যাংকের চিঠি গোপন করেছেন।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৯ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য পটুয়াখালী পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিনে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন দাখিল করেন ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ। তিনি বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদের বড়ভাই।
আবুল কালাম আজাদ তার হলফনামায় দায়দেনার বিষয়ে জানায়, ইসলামী ব্যাংকের পটুয়াখালী শাখায় একশ ৫ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার টাকা, যমুনা ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখায় ৩ কোটি ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৮২৫ টাকা এবং পদ্মা ব্যাংকের পটুয়াখালী শাখায় সাড়ে ৯ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। তবে ওইদিনই (১৫ ফেব্রুয়ারি) খেলাপি ঋণ সাড়ে ২৪ কোটি টাকা উল্লেখ করে পদ্মা ব্যাংক পটুয়াখালী শাখার ব্যবস্থাপক জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দেন। ফলে ব্যাংকের সাথে হলফামায় ১৫ কোটির ব্যবধান উঠে আসে। এরপরও তার হলফনামা বৈধ হওয়ায় নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সংক্ষুদ্ধ হয়ে আপিল করেছেন অপর মেয়রপ্রার্থী ডা. মো. শফিকুল ইসলাম।
পদ্মা ব্যাংক থেকে পাঠানো চিঠিতে মেয়র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ এবং এই ঋণের জামিনদার মহিউদ্দিন আহম্মেদ প্রার্থী হয়ে থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানানো হয়। এ বিষয়ে পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফয়সাল আমীন বলেন, নির্বাচন অফিসে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠির সব তথ্যই সঠিক আছে।
হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মেয়রপ্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, তিনি কিছুই জানেন না। হলফনামা ‘ওরা’ লিখে নিয়েছে। আর তাতে তিনি শুধু স্বাক্ষর করেছেন। তবে ‘ওরা কারা’ এমন প্রশ্ন করলে তিনি কিছুেই জানেন না এবং ব্যস্ত আছেন বলে জানান।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা খান আবি শাহানুর খান বলেন, এ ব্যাপারে আপিল করা হয়েছে। এখন ওটা আপিল কর্তৃপক্ষের বিষয়। আমার সাবজেক্ট শেষ। টাকার বিনিময় তথ্য গোপনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অভিযোগটি মিথ্যা। এর কোনো ভিত্তি নেই।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. নূর কুতুবুর আলম বলেন, আপিল মোকদ্দমা নিষ্পত্তির জন্য ২০ ফেব্রুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। শুনানিতে এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হবে।
তবে ঋণ খেলাপির তথ্য গোপন করলে তার প্রার্থিতা বাতিল না করা আশ্চর্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, টাকার অঙ্ক কোনো বিষয় নয়। মিথ্যা বা ভুল তথ্য দিয়ে এফিডেভিট দিলে তার প্রার্থিতা বাতিল হবে এটিই আইন। ঋণ খেলাপি ও তার জামিনদার যদি প্রার্থী হয়ে থাকে তাহলে তার মনোনয়নও বাতিল হবে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের চিঠি পাওয়ার পরও যদি কোনো প্রার্থীকে বৈধ ঘোষণা করা হয় তাহলে তো তার (রিটার্নিং কর্মকর্তা) চাকুরিই থাকার কথা না।